কলকাতা: পুরাকালে মহিষাসুর নামে এক অসুর ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হয়ে একে একে অধিকার করল সমগ্র মর্ত্য ও পাতাল। একশতবর্ষব্যাপী যুদ্ধের পর দেবতাদের পরাস্ত করে মহিষাসুর তাঁদের তাড়িয়ে দিলেন স্বর্গ থেকে। অধিকার করলেন স্বর্গলোক। এভাবে ত্রিলোক দখল করে সে অসম্ভব মত্ততা ও হিংস্রতায়। মুনি ঋষিরাও রেহাই পেলেন না তার অত্যাচার থেকে।

অমরাবতী  থেকে  বিতাড়িত দেবতারা  ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের শরণাপন্ন হলেন। ব্রহ্মা জানালেন, কঠোর তপস্যাবলে মহিষাসুর তাঁরই কাছ থেকে বর লাভ করেছে যে ত্রিলোকের কোনও পুরুষই তাকে পরাভূত করতে পারবে না। এই কারণেই সে অপরাজেয় হয়ে উঠেছে।

মহিষাসুরের ভয়াবহ অত্যাচারের কাহিনি শুনে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর ক্রোধান্বিত হলেন। তাঁদের মুখমণ্ডল ভীষণাকার ধারণ করল। ত্রিদেবের সেই ক্রোধাগ্নির প্রচণ্ড তেজ ও দেবতাদের পুঞ্জীভূত রোষ সম্মিলিত হয়ে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে হিমালয়ের শীর্ষে মহর্ষি কাত্যায়নের আশ্রমে আবির্ভূতা হলেন এক ‘নারী’। ত্রিভুবনের দুর্গতি বিনাশ করার জন্যই তাঁর আবির্ভাব। এজন্য তাঁর নাম দেবী দুর্গা। ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে দশভূজার সৃষ্টিকার্য হয়েছিল বলে দেবী দুর্গার আর এক নাম ‘কাত্যায়নী’। পুরাণ অনুসারে, শিবের তেজ থেকে দেবীর মুখ, যমের তেজে চুল, বিষ্ণুর তেজে বাহু,  ব্রহ্মার তেজে পদযুগল, অগ্নির তেজে ত্রিনয়ন ও অন্যান্য দেবতার তেজে  দুর্গার সৃষ্টি হয়। বিশ্বকর্মা দিলেন অলঙ্কাররাশি। দুগ্ধসাগরের দেবতা দিলেন রক্তবর্ণ শাড়ি।

অমাবস্যা-পরবর্তী শুক্লপক্ষের সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিথিতে ঋষি কাত্যায়ন দেবীর পুজো করেন। আরাধনা চলাকালে সকল দেবতারা তাঁদের সমস্ত শক্তি ও অস্ত্র দেবীকে প্রদান করলেন। যেমন, ব্রহ্মা দিলেন কমণ্ডলু। দেবরাজ ইন্দ্র দিলেন বজ্র। কুবের দিলেন গদা, বিষ্ণু চক্র এবং মহেশ্বরের কাছ থেকে দেবী  পেলেন পেলেন ত্রিশুল। হিমালয় দেবীকে দিলেন তাঁর বাহন সিংহ। দেবী হলেন দশভুজা, যিনি সর্ব শক্তির অধিকারী।অমরাবতীর দিকে যাত্রা করলেন তিনি।  দেবী দুর্গার রণ হুঙ্কারে ত্রিভূবন কেঁপে উঠল।  সেই সঙ্গে যুক্ত হল তাঁর বাহনের সিংহনাদ।

দেবী দুর্গা প্রবল পরাক্রমে এবং কৌশলে পরাজিত হল মহিষাসুরের বাহিনীকে। এরপর শুরু হল মহিষাসুর এবং দেবী দুর্গার যুদ্ধ। প্রবল যুদ্ধে কম্পিত হয়ে উঠল ত্রিভূবন। মহিষাসুর নানা রূপ ধারণ করে, নানা ছলে, কৌশলে দেবীকে বিব্রত ও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু দেবী দুর্গা ধীরে ধীরে তার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিলেন। শেষ পর্যন্ত  মহিষাসুরের গলায় পা রেখে  ত্রিশুল দিয়ে তার বক্ষ বিদীর্ণ করে দিলেন দেবী।
কালিকা পুরাণ অনুসারে দেবী তিনবার মহিষাসুরকে বধ করেন। আদি সৃষ্টি কল্পে অষ্টাদশভূজা উগ্রচণ্ডী রূপে মহিষাসুরকে বধ করেন। দ্বিতীয় সৃষ্টি কল্পে ষোড়শভুজা ভদ্রকালী রূপে মহিষাসুরকে বধ করেন। আবার তৃতীয় সৃষ্টি কল্পে দশভূজা দেবী দুর্গা রূপে মহিষাসুরকে বধ করেন। মহিষাসুর তৃতীয়বার বধ হওয়ার পর দেবীর আশীর্বাদে তিনি চিরতরে দেবীর পদতলে স্থান পান এবং মহামায়ার সঙ্গেই মহিষাসুরের পুজোও প্রচলিত হয়।