রোশনি শর্মা, কলকাতা: তাঁর গল্প একদিনের নয়। তাঁর গল্প কোনও দিনে বাঁধা যায় না। আর গল্পই বা বলি কী করে? যা জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছেন তিনি, তাকে আর যাই হোক, গল্প বলা যায় না। স্বার্থ যখন গ্রাস করছে প্রায় সব কিছুই, তখন এই সাহসী মেয়ের হার না মানা লড়াই বুকে বল, মনে অনুপ্রেরণা জোগাবে অনেকের। তিনি যা করেছেন, তা জানার পর অনেকেই বলবেন, আয়, আরও বেঁধে বেঁধে থাকি। আয়, সবাইকে নিয়ে বাঁচি। উপলব্ধি হবে, ‘প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’। রাখি দত্ত। সদ্য যুবতী। নিজের লিভারের বেশিরভাগ অংশই নিঃস্বার্থে দান করে দিয়েছেন তিনি। জীবন বাঁচিয়েছেন নিজের বাবার। তিনি যা করেছেন তা শুধুমাত্র একটা দিন অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তুলবে না, বরং তিনি যা করেছেন তা বছরের ৩৬৫ দিনই গাঁথা থাকবে বুকে।


দিনটা ছিল ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯। বোধহয় সেদিনই জীবনের সবথেকে কঠিন সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেছিলেন সদ্য় যৌবনে পা দেওয়া ঝলমলে মেয়ে। রাখি দত্ত। তাঁর কথায়, ‘বাবাকে বাঁচানোটাই সেই মুহূর্তে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি, মা, দিদি মিলে এটাই ঠিক করি।’ কী করেছেন রাখি? বাবাকে বাঁচাতে নিজের লিভারের ৬৫ শতাংশ দান করে দিয়েছেন। গোটা সমাজ, হয়তো বা মানবজাতির সামনে তৈরি করে দিয়েছেন দৃষ্টান্ত।


অসুস্থ রাখির বাবা সেই সময় মেয়ের সিদ্ধান্তের ব্য়পারে কিছুই জানতেন না। কিন্তু মেয়ের হাত ধরেই তিনি নতুন জীবনে পা রাখলেন। এই ঘটনার পর প্রায় দু বছর কেটে গেছে। এখন কেমন আছেন রাখি আর তাঁর বাবা?


 


রাখি বলছেন, ‘এত বড় অপারেশনের পর কিছু সমস্য়া থাকলেও ভাল আছি। ভাল আছে বাবাও।’ নতুন জীবন পেয়ে খুশিতে ডগমগ বাবা। মেয়েকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করছেন। এত বড় আত্মত্যাগ করেছেন রাখি, মেয়ের নামেই নিজের পরিচিত চাইছেন তাঁর বাবা। বলছেন, ‘এরকম সন্তান যেন প্রত্য়েকটি ঘরে ঘরে জন্ম নেয়।‘ কথাগুলো বলার সময় তাঁর চোখের কোণটা কি চকচক করে উঠল না! সম্প্রতি বাবার সঙ্গে জন্মদিনে কেক কাটার ছবি সোশ্য়াল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন রাখি। তাঁদের পরিবার এখন হাসিখুশি।


ঠিক কী ঘটেছিল কয়েক বছর আগে? বেশ কয়েক বছর ধরেই লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন রাখির বাবা। কলকাতার চিকিৎসকরা বেশ কিছুদিন ধরেই লিভার প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। প্রথমে কলকাতায় বাবার চিকিৎসা সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করেন রাখি ও তাঁর পরিবারের বাকিরা। কিন্তু সেভাবে সাড়া না মেলায় তাঁরা বাবাকে নিয়ে যান হায়দরাবাদে। সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। আর সেখানেই জীবনের সবচেয়ে সাহসী সিদ্ধান্তটা নেন রাখি। বাবাকে বাঁচাতে নিজের লিভারের ৬৫ শতাংশ দান করেন তিনি।


মেয়ের দেওয়া জীবনকে নতুন ভাবে উপভোগ করতে কেমন লাগছে? জবাব দিতে গিয়ে গর্বিত বাবার চোখ আনন্দাশ্রু। সমস্ত না বলা কথাই যেন বারিধারা হয়ে নেমে এল গাল বেয়ে।


আর বাবাকে সুস্থ দেখে সাহসী মেয়ের মুখে যুদ্ধজয়ের হাসিটা আরও গাঢ় হল যেন।