নয়াদিল্লি: আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় পি চিদম্বরমকে জামিন দিল না দিল্লি হাইকোর্ট। গত সপ্তাহে সিবিআই দিল্লি হাইকোর্ট আর্জি জানিয়েছিল, এই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে যেন জামিন দেওয়া না হয়, তাঁকে বিচার পর্ব চলাকালে হেফাজতে রাখা হোক। কংগ্রেসের এই শীর্ষ নেতা চম্পট দিতে পারেন, এমন ঝুঁকির উল্লেখ করেছিল তারা। যদিও আজ দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি সুরেশ কাইত ইউপিএ আমলের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর জামিনের আবেদনে সম্মতি না দিয়ে বলেন, তাঁর তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করার কোনও সুযোগ নেই, তবে তিনি সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন, এমন সম্ভাবনা আছে।
গত ২১ আগস্ট চিদম্বরমকে তাঁর নয়াদিল্লির জোরবাগের বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে সিবিআই। প্রায় এক পক্ষকাল তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে তিহার জেলে পাঠানো হয়। গত ২৫ দিন ধরে সেখানে আছেন তিনি। সেখানে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেফাজতে থাকতে হবে তাঁকে। দিল্লি হাইকোর্টে এই মামলায় আগাম জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ার পরদিনই গ্রেফতার হন চিদম্বরম। হাইকোর্ট বলেছিল, প্রাথমিক তথ্যে প্রকাশ, ‘মামলার মূল চক্রী, কিংপিন তিনি’।
নিম্ন আদালতে নয়, চিদম্বরম সরাসরি নিয়মিত জামিনের আবেদন করেছিলেন হাইকোর্টে।
৩৫০০ কোটি টাকার এয়ারসেল-ম্যাক্সিস ডিল ও ৩০৫ কোটি টাকার আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় প্রথম ইউপিএ জমানায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসাবে তদন্তকারী সংস্থাগুলির আতসকাচের নীচে আসে চিদম্বরমের ভূমিকা।
চিদম্বরমের জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সওয়াল করেছিলেন, তিনি পালিয়ে যেতে পারেন। বলেছিলেন, চিদম্বরম মারাত্মক অপরাধে অভিযুক্ত, দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন, পালিয়ে অন্য কোনও দেশে গিয়ে অনির্দিষ্টকাল থাকার প্রয়োজনীয় টাকাপয়সাও তাঁর আছে। কিন্তু মেহতার যু্ক্তি মানেননি বিচারপতি। তিনি বলেন, চিদম্বরমের পালিয়ে যেতে পারেন বা তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করেছেন, এমন কোনও প্রমাণ নেই। তবে তিনি সাংসদ এবং একজন প্রভাবশালী লোক। তদন্ত অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে, ফলে তিনি সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন, এই অনুমান উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় ২০১৭-র ১৫ মে এফআইআর দায়ের করে ২০০৭ সালে ওই কোম্পানির ৩০৫ কোটি টাকা বিদেশ থেকে গ্রহণ করায় চিদম্বরমের আমলে এফআইপিবি ছাড়পত্র মঞ্জুর হওয়ায় বেনিয়ম হয়েছিল বলে অভিযাগ করে সিবিআই। গত বছর এ ব্যাপারে বেআইনি আর্থিক লেনদেন মামলা রুজু করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এই মামলায় অভিযুক্ত চিদম্বরম পুত্র কার্তিকে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করে সিবিআই। পরে তাঁকে জামিন দেয় দিল্লি হাইকোর্ট।
মেহতা দাবি করেছিলেন, আইএনএক্স মিডিয়া গোষ্ঠীর দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠাতা ইন্দ্রানী ও পিটার মুখার্জি ২০০৭-০৮ সালে চিদম্বরমের সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তাঁদের নিজের ছেলের ব্যবসায়িক স্বার্থের দিকে খেয়াল রাখতে বলেছিলেন, এই অভিযোগের সমর্থনে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ আছে। পাল্টা চিদম্বরমের আইনজীবী কংগ্রেস নেতা কপিল সিবাল গত সপ্তাহে হাইকোর্টে বলেন, চিদম্বরম কখনই ইন্দ্রানীর সঙ্গে দেখা করেননি। যদিও সিবিআই জানায়, আইএনএক্স মিডিয়া গোষ্ঠী ও কার্তির সঙ্গে জড়িত সংস্থার লোকজনের মধ্যে চালাচালি হওয়া প্রচুর ইমেল তাদের হস্তগত হয়েছে।