মুম্বই: ‘আমি সত্যিই যেতে চাইনি। বিশ্বাস করো একটা দমকা হাওয়ার ঝটকায় গাড়ির চাকা গড়াতে শুরু করল। আর আমি স্টিয়ারিং ঘোরতে শুরু করলাম...’। চার চাকার সওয়ারিতে সওয়ার ইরফান। একাই। দিগন্ত চেরা রাস্তা আর দুদিকে সবুজ নেমে এসেছে। ইরফান যাচ্ছেন। হঠাৎ থেমে গাড়ির ইউ টার্ন। সংলাপে ইরফান খান সাবলীল ভাবে বলে চলেছেন, ‘মে আপনি বাপ কি কসম খাকে কেহেতা হু. কে মে জানা নেহি চাতা থা।’ হয়ত তাই, এতো তাড়াতাড়ি ইরফান যেতে চাননি। তবে যেতে হল।
২০২০-র ২৯ এপ্রিল, জীবনের রাস্তা থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে উল্টো পথে চলে গেলেন ইরফান খান। মা সঈদা বেগম গত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই জানালেন অন্তিম বিদায়। রেখে গেলেন এক আকাশ সিনেমা।
রূপোলি পর্দায় প্রথম আত্মপ্রকাশ ‘সালাম বম্বে’ ছবিতে। মীরা নায়ারের পরিচালনায় ১৯৮৮ সালে সেই প্রথম বলিউড চিনেছিল জয়পুরের নবাগতকে। তারপর দীর্ঘ ৩২ বছর, একাবারে ‘নন স্টপ’, কোথাও থামেননি ইরফান। অবশেষে থামলেন ‘আংরেজি মিডিয়াম’-এ এসে। হোমি আদাজানিয়ার পরিচালিত এই ছবিটাই হয়ে থাকল তাঁর শেষ ছবি। এরপর আর রূপোলি পর্দায় দেখা যাবে না তাঁকে। জীবনের শেষ ট্যুইটে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে সম্মানিত অভিনেতা ইরফান খান বলে গেলেন, তিনি অন্তর থেকে আবেগপ্রবণ, বাইরে থেকে ভীষণ খুশি...।
১২ এপ্রিল, বেলা ৩টে বেজে ৪৪ মিনিটে ‘আংরেজি মিডিয়াম’ নিয়ে এই পোস্টটি করেছিলেন ইরফান। এই একই পোস্ট তিনি শেয়ার করেছিলেন তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও। এই ছবিতে চম্পক নামের একটি চরিত্রে ইরফান খানকে অভিনয় করতে দেখা যায়। যিনি তার মেয়ের লন্ডনে গিয়ে পড়াশুনার স্বপ্নপূরণ করেন। ইরফান তাঁর শেষ পোস্টটি করেছেন সেই চরিত্র নিয়েই। যেখানে তিনি একই সঙ্গে লিখে গেলেন, “অন্তরের প্রেম বাহিরেও প্রকাশিত হয়।”
কোলনে সংক্রমণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন ইরফান। চিকিৎসা চলছিল লন্ডনের একটি হাসপাতালে। কাল শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে অভিনেতাকে ভর্তি করা হয় মুম্বইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে। ২৪ ঘণ্টাও কাটল না, মৃত্যু হল অভিনেতার।