জিয়াগঞ্জ: অবশেষে কিনারা হল জিয়াগঞ্জে বন্ধুপ্রকাশ পাল হত্যা রহস্যের। মুর্শিদাবাদেরই সাগরদিঘি থেকে, উৎপল বেহরা নামে বছর কুড়ির এক তরুণকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেছে উৎপল, দাবি পুলিশের। পুলিশ সূত্রে খবর, শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পালের গ্রাম সাগরদিঘির সাহাপুরেরই বাসিন্দা ধৃত উত্পল বেহরা। পেশায় রাজমিস্ত্রি ওই যুবক সপরিবারে শিক্ষক খুনে জড়িত বলে পুলিশের দাবি। ২৪ হাজার টাকা নিয়ে গোলমালের জেরেই, আক্রোশবশত এই খুন বলে পুলিশকে জনিয়েছে তরুণ।
ধৃত উৎপল পুলিশের কাছে জানিয়েছে, লগ্নি সংস্থায় জমা দেওয়া ২৪ হাজার টাকার রসিদ না দিয়ে উল্টে গালিগালাজ করেন বন্ধুপ্রকাশ। সেই আক্রোশ থেকেই মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে শিক্ষক খুনের ছক। নিহত শিক্ষকের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া রক্তমাখা লগ্নি সংস্থার কাগজ থেকেই মেলে সূত্র। একই গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় শিক্ষকের স্ত্রী-পুত্র আততায়ীকে চিনত, সেই কারণেই সপরিবারে খুন। তিনটি খুন করতে আততায়ী সময় নিয়েছিল পাঁচ মিনিট। সাংবাদিক বৈঠকে দাবি জেলা পুলিশ সুপারের।
বিজয়া দশমীর দিন সাহাপুর হাইস্কুলের শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি ও ছ’বছরের ছেলে অঙ্গন খুন হন হাঁসুয়ার কোপে। তারপর থেকেই খুনের পেছনে নানারকম তত্ত্ব উঠে এসেছে।
বন্ধুপ্রকাশের খুনের পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে, এমন দাবি করে সোচ্চার হয়েছিল বিজেপি ও আরএসএস। তারা দাবি করে মৃত মাস্টারমশাই আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাল্টা যুক্তি দেওয়া হয় রাজ্যের শাসকদলের তরফে। সেই থেকেই রাজ্য-রাজনীতি সরগরম বন্ধুপ্রকাশ পালের মৃত্যু রহস্য নিয়ে।
তদন্তে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সিআইডি। আটক করা হয় দুজনকে। পুলিশ সূত্রের খবর বেশ কয়েকটি লগ্নি সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বন্ধুপ্রকাশ পাল। শিক্ষক পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে বেশ কয়েকজনকে তিনি ওই সমস্ত সংস্থায় বিনিয়োগ করাতেন।
বন্ধুপ্রকাশ পালের ঘর থেকে পাওয়া একটি ডায়েরির পাতার লেখা নিয়েও দানা বাঁধে সন্দেহ। স্ত্রীর সঙ্গে মন কষাকষি ছিল কি না, উঠছিল প্রশ্ন।
শেষপর্যন্ত বিভিন্ন লোককে পুলিশ জেরা করে কিছুটা নিশ্চিত হয়, খুনের পিছনে আর্থিক বিবাদই।
পুলিশের দাবি, ধৃত জেরায় জানিয়েছে, প্রথম দফার ২৪ টাকার রসিদ পেলেও, দ্বিতীয় দফার ২৪ হাজার টাকার রসিদ দিচ্ছিলেন না বন্ধুপ্রকাশ। স্কুলে গিয়ে বেশ কয়েকবার তাঁর সঙ্গে দেখা করেন তাঁর বাবা। টাকা ফেরত দেওয়া হোক, না হলে রসিদ, এ কথা বলে শিক্ষককে ফোন করে উৎপল। ধৃতের দাবি, সেসময় তাকে গালিগালাজ করেন বন্ধুপ্রকাশ। এরপরই শিক্ষক খুনের ছক, জেরায় কবুল ধৃতের।