কলকাতা: শনিবার গোটা দেশে পালিত হচ্ছে মহাত্মা ফুলের জন্মবার্ষিকী। অনেকে দিনটিকে মহাত্মা ফুলে জয়ন্তী বলে থাকেন।


পুরো নাম জ্যোতিরাও গোবিন্দরাজ ফুলে। জন্ম ১৮২৭ সালের ১১ এপ্রিল। মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার কাটগাঁওয়ে। সমাজ সংস্কারক হিসাবে এবং দলিত ও মহিলাদের সমান আধিকারের দাবিতে সরব হওয়ার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। তিনি বরাবর মহিলাদের শিক্ষা ও সমাজে সকলের সমানাধিকারের দাবিতে আন্দোলন করে গিয়েছেন। নারী স্বাধীনতার হয়ে জোরাল সওয়াল করেছেন। পাশাপাশি অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় ভেদাভেদ ইত্যাদির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য লিখেছেন একাধিক বই। ১৮৯০ সালের ২৮ নভেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আজ, শনিবার পালিত হচ্ছে মহাত্মা ফুলের ১৯৩তম জন্মবার্ষিকী। ছোট থেকেই ধর্মীয় ভেদাভেদকে ঘৃণা করতেন। দলিতদের ওপর সামাজিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। শূদ্র শ্রেণির পরিবারে জন্ম। পারিবারিক জীবিকা বলতে চাষবাস। মাঠের সব্জি বাজারে বিক্রি করে দিন গুজরান করত তাঁর পরিবার। তবে সমাজের নিচু তলার হওয়ায় নানারকম ভেদাভেদের শিকার হতে হয়েছে মহাত্মা ফুলেকেও।

পুণেতে এক স্কটিশ খ্রীস্টান মিশনারির স্কুলে ভর্তি হন তিনি। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং দাসপ্রথার বিরুদ্ধে সে দেশের জনগণের সংগ্রাম মহাত্মা ফুলের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল।

সাবিত্রীবাঈ ফুলের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। সাবিত্রীবাঈকে ভারতের প্রথম মহিলা শিক্ষক বলে মনে করা হয়। অনেকে মনে করেন, সাবিত্রীবাঈকে বাড়িতেই শিক্ষিত করে তুলেছিলেন মহাত্মা। ১৮৪৮ সালে ফুলে দম্পতি পুণেতে সমাজের নিচু শ্রেণির মেয়েদের জন্য একটিু স্কুল চালু করেন। সেই সময় ভারতে মহিলাদের শিক্ষার কথা অনেকে কল্পনাও করতে পারতেন না। পরবর্তীকালে ফুলে দম্পতি পুণেতে একাধিক স্কুল চালু করে।

বাল্যবিবাহের তীব্র বিরোধী ছিলেন মহাত্মা ফুলে। সেই সঙ্গে বিধবা বিবাহ চালু করার ব্যাপারেও সরব হয়েছিলেন। তৎকালীন সমাজে বাল্যবিবাহের চল যেমন ভীষণরকমভাবে ছিল, বিধবা বিবাহ সামাজিক অন্যায় বলে গণ্য করা হত। সতীদাহ প্রথার চলও ছিল।

মহাত্মা ফুলে ‘সত্যশোধক সমাজ’ নামের একটি সংগঠন তৈরি করেছিলেন, যার কাজই ছিল সাম্য এবং একতার হয়ে সওয়াল করা এবং দলিতদের ওপর থেকে অস্পৃশ্য তকমা তুলে নেওয়া। বলা হয়, এক ব্রাহ্মণ বন্ধুর বিয়েতে গিয়েছিলেন মহাত্মা ফুলে। দলিত হয়েও ব্রাহ্মণদের বিয়েতে যাওয়ায় সেই বন্ধুর বাবা তাঁকে অপমান করেছিলেন। ঘটনাটি তাঁকে এতটাই নাড়া দিয়েছিল যে, তারপর থেকেই সকলের সমানাধিকারের দাবিতে সরব হন মহাত্মা ফুলে।