বেঙ্গালুরু: কর্ণাটকের রাজনৈতিক টানাপোড়েন গড়াতে চলেছে আগামী সপ্তাহে। শুক্রবারও হল না রাজ্য বিধানসভায় আস্থা ভোট। আজ শুক্রবার বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য রাজ্যপাল দুইবার নির্দেশিকা পাঠালেও তা উপেক্ষা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামী। এরফলে আরও জটিল হল রাজ্যের সাংবিধানিক সংকট। সেইসঙ্গে আইনি লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটও তৈরি হয়েছে।
জোটের ১৫ জন বিধায়ক পদত্যাগ করায় অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে রাজ্যের ১৪ মাসের কংগ্রেস-জেডি (এস) জোট সরকার। প্রায় পক্ষকাল আগে তাঁদের ইস্তফা ঘিরে যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, তা আজও কাটল না। বিধানসভার অধ্যক্ষ কেআর রমেশ অধিবেশন সোমবার পর্যন্ত মুলতুবি ঘোষণা করেছেন।
এখন রাজ্যপাল ভাজুভাই ভালা কী সিদ্ধান্ত নেন, সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।
এদিন দিনের একেবারে শেষে অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণার আগে অধ্যক্ষ স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, সভার মুখ্যমন্ত্রী যে আস্থা প্রস্তাব এনেছেন, তার নিষ্পত্তি হবে আগামী সোমবারই। কোনও পরিস্থিতিতেই আর তা দীর্ঘায়িত করা হবে না। তাঁর এই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছে সরকার।
এদিকে, বিধানসভায় যখন আস্থা প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক চলছে তখন রাজ্যপালের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে কুমারস্বামী ও কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। সেইসঙ্গে গত ১৭ জুলাইয়ের নির্দেশেরও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। বিধায়কদের ওপর হুইপ জারির অধিকার রয়েছে বলেও দাবি করেছে কংগ্রেস। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল যে, বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দিতে বিধায়কদের বাধ্য করা যাবে না।
কুমারস্বামী আদালতকে বলেছেন যে, কীভাবে আস্থা প্রস্তাবে বিতর্ক চলবে সে বিষয়ে রাজ্যপাল নির্দেশ দিতে পারেন না।
বৃহস্পতিবারই কর্নাটকের রাজ্যপাল বলেছিলেন, শুক্রবার দুপুর দেড়টার সন্ধ্যার মধ্যেই আস্থা ভোট সম্পূর্ণ করতে হবে। কিন্তু তা হয়নি। শুক্রবার রাজ্যপাল ফের কুমারস্বামীকে নির্দেশিকা পাঠান, ‘‘শুক্রবারের মধ্যে আস্থা ভোট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করুন।’বিধানসভায় আস্থা প্রস্তাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে রাজ্যপালের নির্দেশিকাকে কটাক্ষ করেন কুমারস্বামী। তিনি বলেন, ‘আমি দ্বিতীয় প্রেমপত্র পেয়েছি। তাঁর এখন সচেতনতা এসেছে। রাজ্যপাল তাঁর চিঠিতে ঘোড়া কেনাবেচার কথা উল্লেখ করেছেন..তিনি কি এর আগে পর্যন্ত কিছু জানতেন না। আমাদের রাজনীতি করতে দেওয়া হোক..আমরাও এখানে আছি..আমরা ভয় পাব না ও পালিয়েও যাব না। বিধায়করা যখন পদত্যাগ করলেন তখন কেন রাজ্যপাল ঘোড়া কেনাবেচা দেখতে পেলেন না’।

আস্থা ভোট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা নিয়ে সভাতেও জোর বিতর্ক চলে। অধ্যক্ষ বলেন, ‘প্রচুর আলোচনা হয়েছে, আমি এবার তা বন্ধ করতে তাই (আস্থা প্রস্তাব)’।
অধ্যক্ষ সভার কাজ আর বিলম্বিত না করার কথাও বলেন। মুখ্যমন্ত্রী তখন আগামী সোমবার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার কথা বলেন।
বিজেপি বিধায়ক সুরেশ কুমার বলেন, এভাবে টেনে নিয়ে গেল আস্থা ভোটের পবিত্রতা নষ্ট হবে। শুক্রবারই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার ওপর জোর দেন তিনি। বিজেপি নেতা বিএস ইয়েদুরাপ্পা বলেন, তিনি মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি।
শাসক জোটের মধ্যে অবশ্য আস্থা প্রস্তাব সম্পূর্ণ করার ব্যাপারে কোনও তাড়াহুড়ো ছিল না। এর আগে কংগ্রেস পরিষদীয় নেতা সিদ্দারামাইয়া বলেন, বিতর্কে অংশগ্রহণের জন্য অনেক বিধায়কই তাঁদের নাম দিয়েছেন। তাই সোমবার পর্যন্ত বিতর্ক চলতে পারে।
সময়সীমা নিকটবর্তী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শাসক জোটের সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যপালের এ ধরনের নির্দেশদানের ক্ষমতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন।