নয়াদিল্লি: বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে চলা তিনদিনের ভারত সফর শেষ মূহূর্তে বাতিল করলেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমিন। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) সংসদের দুই কক্ষেই গৃহীত হওয়ার পর অসম সহ উত্তর পূর্বাঞ্চল বিলের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। তার মধ্যেই প্রতিবেশী দেশের শীর্ষমন্ত্রীর সফর বাতিলের ঘোষণা। ষষ্ঠ ভারত মহাসাগর ডায়ালগ-এ যোগ দিতে আজ বিকেল ৫টা ২০তে তাঁর নয়াদিল্লি পৌঁছনোর কথা ছিল। কিন্তু নিজের দেশে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের অনুষ্ঠানে থাকতে হবে বলে নয়াদিল্লি না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মোমিন।
জল্পনা চলছিল, সিএবি ইস্যুতেই তিনি সফর বাতিল করলেন কিনা। একটি সূত্রের খবর, মোমিন সফর বাতিলের আগে বিলের সমালোচনা করে মন্তব্য করেন, ওরা (ভারতীয়রা) নিজেদের মধ্যে লড়াই করুক! বাংলাদেশি মিডিয়ার একাংশ তাঁকে উদ্ধৃত করে বলে, ওদের দেশের ভিতরেই এত সমস্যা। ওরা নিজেরাই মারামারি করুক। তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না। বন্ধু দেশ হিসাবে আমরা আশাবাদী, ভারত এমন কিছু করবে না, যাতে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক মার খাবে।
যদিও প্রকাশ্যে সিএবি ইস্যুতে সফর বাতিলের ধারণা খারিজ করেছেন তিনি নিজেই। তাঁকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা বলেছে, ‘বুদ্ধিজীবী দিবস’ ও ‘বিজয় দিবসে’ অংশগ্রহণ করতে হবে, তাই নয়াদিল্লি সফর বাতিল করতে হল। আরও এজন্য যে, আমাদের রাষ্ট্রীয় মন্ত্রী দেশের বাইরে, মাদ্রিদে ও বিদেশসচিব দি হেগে রয়েছেন। বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁর জায়গায় নয়াদিল্লির সামিটে থাকবেন ডিরেক্টর জেনারেল। মোমিন আরও বলেছেন, দেশে থেকে যাওয়ার প্রয়োজন বড় হয়ে ওঠায় সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে সামনের জানুয়ারিতে পরের বৈঠকে থাকার অপেক্ষায় রয়েছি। ডিজিকে অনুষ্ঠানে পাঠাচ্ছি।
সিএবি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের চরিত্র দুর্বল করবে বলে গতকালের মন্তব্যের পরদিনই ষষ্ঠ ভারত মহাসাগর ডায়ালগ সামিটে না থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন মোমিন। গতকাল ঢাকায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঐতিহাসিক ভাবেই ভারত একটি সহনশীল রাষ্ট্র যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে, কিন্তু তা থেকে বিচ্যুতি ঘটলে তাদের সেই ভাবমূর্তি দুর্বল হবে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার, এই অভিযোগও অস্বীকার করেন মোমিন। এমন অভিযোগ ‘অসত্য’ বলে দাবি করে বলেন, যারাই এ খবর দিয়ে থাকুক, তা সঠিক নয়। আমাদের দেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই নেন বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী লোকজন। আমরা কাউকে তাঁর ধর্ম পরিচয় দিয়ে বিচার করি না।
গতকাল রাজ্যসভায় ভোটাভুটিতে সিএবি গৃহীত হয়েছে, যার উদ্দেশ্য পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান, এই তিন প্রতিবেশী দেশ থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার অ-মুসলিম শরণার্থীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া।