গোয়ালিয়র: বৃষ্টি হচ্ছিল। কোথাও কোথাও রাস্তা ছিল খানাখন্দে ভরা। ফলে স্কুটার চালানো খুবই কষ্টকর হচ্ছিল। কিন্তু এমন সব বাধা আটকাতে পারেনি ঝাড়খণ্ডের এক ব্যক্তিকে। স্কুটারে স্ত্রীকে চাপিয়ে ১২০০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছলেন পরীক্ষা কেন্দ্রে। তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মধ্যপ্রদেশের পরীক্ষা কেন্দ্রে ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন (ডিএড) পরীক্ষায় বসেছিলেন।
আদিবাসি দম্পতি ধনঞ্জয় কুমার (২৭) ও তাঁর স্ত্রী সোনি হেমব্রম (২২) স্কুটারে চড়ে ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা জেলার গাঁটা তোলা গ্রাম থেকে আসেন গোয়ালিয়রের পরীক্ষা কেন্দ্রে। শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে ইচ্ছুকদের এই পরীক্ষায় পাশ করা প্রয়োজন।
স্ত্রীকে স্কুল শিক্ষিকা হিসেবে দেখাটা কুমারের একটা স্বপ্ন। আর এই স্বপ্নে ভর করেই চার রাজ্যজুড়ে প্রায় ১২০০ কিমি দূরত্ব স্ত্রীকে স্কুটারে চাপিয়ে অতিক্রম করেছেন তিনি।
কোভিড-১০ জনিত পরিস্থিতিতে যানবাহন অপ্রতুল। এজন্যই তাঁরা স্কুটারে চড়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে রওনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত, জানিয়েছেন কুমার।
কুমার বলেছেন, আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। প্রথমে এত কষ্টকর যাত্রার ঝুঁকি নিয়ে চায়নি। কিন্তু শেষপর্যন্ত আমার জেদ দেখে ও রাজি হয়।
মধ্যপ্রদেশের সেকেন্ডারি শিক্ষা বোর্ডের আয়োজিত ডিএড পরীক্ষার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে ৩০ অগাস্ট গোয়ালিয়রে পৌঁছন কুমার। পরীক্ষা চলবে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
তাঁদের এই যাত্রার ভিডিও কয়েকজন সংবাদমাধ্যমের কর্মীর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর জেলা প্রশাসন তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসে।
কুমার বলেছেন, গোয়ালিয়র আসতে ট্যাক্সি ভাড়া করলে ৩০ হাজার টাকার মতো লাগত। এত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। যেটুকু গয়নাগাঁটি ছিল, তা বিক্রি করে হাজার দশেক টাকা পেয়েছি। এখনও পর্যন্ত রাস্তায় ও এখানকার দীনদয়াল নগরে বাড়ি নিতে পাঁচ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।
কুমার অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন। কিন্তু স্ত্রী শিক্ষিকা হোন, এমনটাই স্বপ্ন তাঁর। এক ক্যাটারারের কাছে রাঁধুনি হিসেবে কাজ করেন তিনি। তিনমাস আগে লকডাউনের কারণে সেই কাজটুকুও গিয়েছে তাঁর।
কুমার বলেছেন, ২৮ অগাস্ট সকালে রওনা দিয়েছিলাম। পথে মুজফফরপুর ও লখনউয়ে রাতে থেমেছি।
গত বছরের ডিসেম্বরেই তাঁদের বিয়ে হয়েছে। সোনি বলেছেন, প্রথমে ভেবেছিলাম , এবার আর পরীক্ষা দেওয়া হল না। কিন্তু স্বামীর জেদ ও সাহস দেখে আমি এত দূরের যাত্রায় রাজি হই। বৃষ্টির জন্য রাস্তায় সমস্যায় পড়েছিলাম। রাস্তায় তো আমার সামান্য জ্বরও হয়েছিল। এখন সবকিছু ঠিকঠাক। ঝাড়খণ্ডে আমি চাকরির জন্য আবেদন করব। আমি চাকরি পাব বলেই আশাবাদী।
এই দম্পতির এই যাত্রার খবর পাওয়ার পর গোয়ালিয়রের কালেক্টর কৌশলেন্দ্র বিক্রম সিংহ জেলা মহিলা ক্ষমতায়ন অফিসার শালিন শর্মাকে তাঁদের খেয়াল রাখা ও অবিলম্বরে পাঁচ হাজার টাকার সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন।
শর্মা জানিয়েছেন.প্রশাসন তাঁদের বাড়ি ভাড়ার খরচ দেবে এবং খাবারের ব্যবস্থা করবে। সেইসঙ্গে গ্রামে নিরাপদে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাবও তাঁদের দেওয়া হয়েছে। ওই তরুণী অন্তঃসত্ত্বা। এজন্য তাঁর প্রতি বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। রবিবার তাঁর মেডিক্যাল পরীক্ষা ও আল্ট্রাসাউন্ড করা হবে।