অযোধ্যা: রুপোর মুকুট পরে অযোধ্যায় রুপোর ইটে রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন। সরযূ নদীর তীরে স্বর্ণযুগের সূচনা। ১৯৮৪ সালে বিজেপির নেওয়া অযোধ্যা, কাশী ও মথুরায় মন্দির পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রথম কাজ সম্পূর্ণ। নেপথ্যে লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশী থাকলেও ‘সাইনবোর্ড’ হল নরেন্দ্র মোদিরই। ‘মিশন অ্যাকমপ্লিশড’। ভারতের শীর্ষ ন্যায়ালয়ের এক হাজার পয়তাল্লিশ পাতার রায়ে ‘জন্মভূমি’ ফেরত পেয়েছেন ‘রামলালা’। ৫ অগাস্ট ২০২০, সেই ভূমিতে মন্দির নির্মাণের প্রথম ইট গেঁথে নতুন ইতিহাসের সূচনা করলেন নরেন্দ্র মোদি।


'মসজিদ গুড়িয়ে মন্দির'


রাম জন্মভূমি উদ্ধারের পর পদ্ম শিবিরের ‘মিশন মথুরার’ ডঙ্কা বেজে গিয়েছে। কর্ণাটকের পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা কে এস ঈশ্বরপ্পার হুঙ্কার, “মথুরা, কাশীতেও মসজিদ ভেঙে মন্দির হবে।” কট্টরপন্থী এই নেতার বক্তব্য, “দেশের মানুষের স্বপ্ন সফল হয়েছে। আমি কাশী, মথুরাতেও গিয়েছি। সেখানে এখনও আমাদের দাসত্বের প্রতীক রয়ে গিয়েছে। সেখানে ২টি মসজিদ রয়েছে। যখন মথুরায় শ্রীকৃষ্ণের মন্দিরে পুজো দিতে যাই, দাসত্বের সেই প্রতীক মনে করিয়ে দেয় আমরা এখনও দাস। কাশী মন্দিরে গেলেও একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই। গোটা বিশ্বের হিন্দু জাতি চায় মথুরা ও কাশী থেকে সেই দাসত্বের প্রতীক মুছে যাক। সেখানেও মসজিদ গুড়িয়ে মন্দির নির্মাণ হবে”।


'বিজেপির অ্যাজেন্ডায় নেই কাশী-মথুরা'


যদিও কর্ণাটকের মন্ত্রীর এই বক্তব্যে কোনও রকম শিলমোহর দিচ্ছেন না বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা। রাজ্যে দীর্ঘদিনের বিজেপি সভাপতি এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় সম্পাদকের সাফ কথা, “মথুরা, কাশী এখন বিজেপি-র অ্যাজেন্ডায় নেই।” কর্ণাটকের কোন মন্ত্রী কী বললেন, তা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত মত। বিজেপি এখন মথুরা, কাশী নিয়ে ভাবছে না। সাফ জানিয়ে দিলেন বঙ্গ বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা।



রাহুলবাবু আমল না দিলেও আরএসএস, ভিএইচপি সহ আরও ‘হিন্দুত্ববাদী’ সংগঠনের প্রকাশ্য স্লোগান, ‘অযোধ্যা তো ঝাঁকি হ্যায়/মথুরা কাশী বাকি হ্যায়’- নিয়ে গেরুয়া শিবিরের কোনও রকম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব  নেই।


আইনি বাধা!


১৯৮৪ সালে বিজেপিতে প্রথম অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ, কাশীতে জ্ঞানবাপী মসজিদ এবং মথুরায় শাহি ইদগা সরিয়ে মন্দির স্থাপনের প্রস্তাব ওঠে। ১৯৮৯ সালে সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়। এরপর আডবাণীর রথযাত্রা এবং বিরানব্বইয়ের ‘বাবরি মসজিদ ভাঙা’-র মতো ঘটনা ঘটে। অবশেষে আইনি লড়াইয়ে জয় এবং ২০২০ সালের ৫ অগাস্ট লক্ষ্যপূরণ হল বিজেপির। অযোধ্যার আইনি লড়াই স্বাধীনতার আগে থেকেই শুরু হওয়ার কারণে গেরুয়া শিবির এদিক থেকে খানিক সাহায্য পেলেও সমস্যা রয়েছে মথুরা ও কাশী নিয়ে।



কারণ, ১৯৯৯ সালে পি ভি নরসিমা রাও-এর সরকার একটি আইন পাশ করে, যার চার নম্বর ধারায় বলা হয়, স্বাধীন ভারতে কোনও স্থাপত্য সরিয়ে অন্য স্থাপত্য নির্মাণ করা যাবে না। ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘মন্দিরের জায়গায় মসজিদ নয়, মসজিদের জায়াগায় মন্দির নয়’। তবে এই ধারার অবলুপ্তির জন্য অনেক আগে থেকেই কোর্টে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। অযোধ্যার মতো এখানেও কি লক্ষ্যপূরণ হবে, বলবে সময়ই।