কলকাতা: তিনি নেই। আবার আছেনও। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর, কলকাতার ভবানীপুরের বাড়ি থেকে কেওড়াতলা মহাশ্মশানের দিকে শেষযাত্রা, তারপর আর ফেরেননি মৃণাল সেন। হৃদযন্ত্র বিকল হওয়ায় থেমে গিয়েছিল কিংবদন্তীর জীবন। কিন্তু সিনেমায়? না, সেখানে তাঁর শেষ নেই। সিনেমা যদি সমুদ্র হয়, তাহলে সেই সৈকতের তীর ধরে দিগন্ত পর্যন্ত অবিরাম, অবিশ্রান্ত হেঁটে চলেছেন ‘মিস্টার সেন’।


আজ কিংবদন্তীর ৯৭তম জন্মদিন। বিদেশ থেকেই প্রবাদপ্রতিম সিনে ব্যক্তিত্বকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন তাঁর ছেলে কুণাল সেন।


সাল ২০১০। সেবারই সম্ভবত শেষবার মৃণাল সেনের কোথাও যাওয়া। কান চলচ্চিত্র উৎসবেই দেশের বাইরে পাড়ি দিয়েছিলেন কিংবদন্তী পরিচালক। সেই সফরে তাঁর সঙ্গী ছিল ছেলে কুণাল সেন।



ফেসবুকে মৃণাল তনয় লিখেছেন- ঠিক দশ বছর আগে। ২০১০ সালে বাবার সঙ্গে আমি শেষবার ফ্রান্সে গিয়েছিলাম কান চলচ্চিত্র উৎসবে। সেটাই শেষবার। সেবছর কান তাদের সম্মানীয় ক্লাসিক বিভাগে দেখিয়েছিল ‘খন্ডহর’ (১৯৮৪ সালে মৃণাল সেনের পরিচালনায় তৈরি হয়েছিল এই ছবি। পরে এই ছবির জন্যই শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জাতীয় পুরস্কার জিতেছিলেন মৃণাল সেন)। তখন তাঁর শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না এবং মা-ও অসুস্থ ছিলেন। সে কারণেই মা ওই সফরে আসতে পারেননি। আমি যেন সবসময় সঙ্গে থাকি, এই শর্তেই বাবাকে ছেড়েছিলেন। আমি দেখেছিলাম নিজের সবথেকে প্রিয় কান চলচ্চিত্র উৎসব নিয়ে তিনি কতটা উদগ্রীব। ফ্র্যাঙ্কফুর্টে তাঁর সঙ্গে দেখা করি এবং সেখানেই কয়েকদিন বিশ্রাম নিতে বলি। তারপর কানের উদ্দেশে রওনা। এই চলচ্চিত্র উৎসব সবসময়ই তাঁর জন্মদিনের সময় হত। দেখেছি, তিনি তাঁর প্রিয়জনদের সঙ্গে এই দিনটি কাটাতেন। সেবছর ১৪মে প্রিয়জন কয়েকজনকে নিয়ে একটি নৈশভোজে আমরা মিলিত হয়েছিলাম। তাঁর উজ্জ্বল মুখ, তিনি হেঁটে যাচ্ছিলেন সমুদ্র সৈকত ধরে। কিন্তু তিনি জানতেন, সবটা আর আগের মতো নেই। যে যৌবন এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে তিনি অতীতে হেঁটেছেন তা আর নেই। সফরটা ছিল অম্লমধুর। তবে আমি খুশি আমরা সেখানে ছিলাম। তারপর সম্ভবত তিনি আর কোথাও যাননি।