আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় ভোট। এদিকে, আজ যেখানে প্রধানমন্ত্রীর সভা, সেই রামলীলা ময়দান থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে দরিয়াগঞ্জ। গত শুক্রবার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদের জেরে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় দরিয়াগঞ্জ। সেই কারণে মোদির সভা ঘিরে আজ কড়া নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়েছে।
আজ রামলীলা ময়দানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রথমেই তিনি বলেন, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য রক্ষাই ভারতের বৈশিষ্ট্য। দেশজুড়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ নিয়ে যে অশান্তির আঁচ ছড়িয়ে পড়ছে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা, ‘মোদিকে পছন্দ না হলে, তাঁর বিরোধিতা করুন...মোদির মূর্তি পোড়ান, দেশের সম্পত্তি পোড়াবেন না।’
তারপর দিল্লির মানুষের জন্য তাঁর সরকার কী কী করেছে, তা নিয়ে বক্তব্য রাখেন মোদি।
- দিল্লির একটা বড় অংশের মানুষের বাসস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। তাঁদের সঙ্গে কপটতা করা হয়েছে, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। সমস্যা মেটাবার চেষ্টা আগে কেউ করেনি। আপনারা যাঁদের ওপর নির্ভর করেছেন, তারা কী করেছিল? এরা তখন নিজেদের ঘনিষ্ঠদের জন্য অবৈধভাবে বাংলো তৈরি করছিল। এরা আপনাদের জন্য কিছু করেনি, আমাকে করতেও দেয়নি।
- আমরা দু’হাজারেরও বেশি সরকারি বাংলো খালি করিয়েছি। চল্লিশ লক্ষ গরিবকে তাঁদের অধিকার দিয়েছি।
- দিল্লির উন্নয়ন কেন্দ্রের অগ্রাধিকারের তালিকায়। দিল্লির মেট্রো পরিষেবার অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ হয়েছে। দিল্লির আপ সরকার পানীয় জল সমস্যা নিয়ে উদাসীন। কয়েকদিন ধরে দেশবাসীকে ভুল বোঝানো হচ্ছে।
- সোশাল মিডিয়ায় ভুয়ো ভিডিও দিয়ে অশান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সংসদে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়েছে।
- আপনাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য দুই কক্ষের সাংসদরা বিল পাস করিয়েছেন। আপনারা আমাদের সংসদের সম্মান করুন।
- আমিও আপনাদের সঙ্গে গণতন্ত্রের প্রতিনিধিদের প্রণাম জানাচ্ছি। এই বিল পাস হওয়ার পর কয়েকটি দল গুজব ছড়াচ্ছে। এরা মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে।
- দিল্লির অজস্র কলোনিকে বৈধ করার সময় কারও ধর্ম জানতে চাইনি। কারও কাছে কোনওকিছুর প্রমাণ চাইনি।
- এই সিদ্ধান্তে হিন্দু-মুসলিম-শিখ-খ্রিস্টান, সবার উপকার হয়েছে। আমরা দেশকে ভালোবাসি বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
- একটা বিলে চল্লিশ লক্ষ মানুষকে অধিকার দিয়েছি। আর এরা বলছে আমি নাকি মানুষের অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছি।
- মানুষ এই মিথ্যে মেনে নেবে না। আমার কাজে কোথাও ভেদাভেদের গন্ধ পেলে সবাইকে জানান।
- উজ্জ্বলা যোজনা চালু করার সময় আমি কারও ধর্ম জানতে চাইনি। কংগ্রেসের মতো বিভাজনের রাজনীতি আমি করিনি। দেড় কোটির বেশি গরিবের বাসস্থান তৈরি করে দিয়েছি। কারও ধর্ম জিজ্ঞেস করিনি।
- কাগজ আর সার্টিফিকেটের নামে মুসলিমদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। কেন আমার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যে অভিযোগ আনা হচ্ছে।
- রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য দিল্লি সরকার আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু করেনি। এই প্রকল্পে কাউকে তাদের ধর্ম জিজ্ঞাসা করা হয়নি।
- এসব অভিযোগ করে ভারতকে বিশ্বের সামনে বদনাম করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বাস-ট্রেনে আগুন ধরানো হয়েছে। করদাতাদের টাকায় তৈরি সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছে। এদের রাজনীতি আসলে কেমন, দেশ বুঝে গেছে।
- বিজেপির দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার শোক এরা এখনও ভুলতে পারেনি। মোদিকে পছন্দ না হলে, তাঁর বিরোধিতা করুন। মোদির মূর্তি পোড়ান, দেশের সম্পত্তি পোড়াবেন না।
- পুলিশকর্মীদের ওপর হামলা করে কী পাবেন আপনারা? কেন ভুলে যাচ্ছেন, যখন আপনাদের সরকার ছিল, এই পুলিশকর্মীরাও আপনাদেরই ছিলেন?
- ‘হিংসা বন্ধ করার জন্য আপনারা একটাও শব্দ বলছেন না। তার মানে পুলিশকর্মীদের ওপর হামলায় আপনাদের মৌন সম্মতি আছে। মিথ্যের কারবারীদের চিনে নিতে হবে। এদের রাজনীতি দশকের পর দশক ধরে ভোটব্যাঙ্কের ওপরেই টিকে আছে।
- আর এক দল এই রাজনীতি থেকে ফায়দা তুলছেন। তাঁরা ভাবতেন, তাঁরা যা বলবেন, সেভাবেই দেশ চলবে। যখনই দেশ তাঁদের প্রত্যাখ্যান করল, আসল রূপটা বেরিয়ে এল।
- ‘নাগরিকত্ব আইন দেশের কোনও নাগরিকের জন্যই নয়। তা তিনি হিন্দু হোন বা মুসলমান। একশো তিরিশ কোটি দেশবাসীর সঙ্গে এই আইনের সম্পর্ক নেই। এনআরসি যখন প্রথম তৈরি হয়, তখন কি ঘুমোচ্ছিলেন? আমরা তো এনআরসি তৈরিই করিনি।
- কংগ্রেস ও তার সঙ্গীরা বলছে, কাকে কান নিয়ে গেল। সেই শুনে কিছু লোক কাকের পিছনে ছুটছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শুধু অসমে এনআরসি হয়েছে।
- কংগ্রেস গুজব ছড়াচ্ছে, যে মুসলমানদের নাকি ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে। কংগ্রেস ও শহুরে নকশালরা ডিটেনশন ক্যাম্পের গুজব ছড়াচ্ছে। এই গুজব সম্পূর্ণ মিথ্যে।
- ভারতীয় মুসলমানদের সঙ্গে নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসির সম্পর্ক নেই। এরা মিথ্যে বলতে গিয়ে কত নিচে নামতে পারে, ভেবে অবাক হয়ে যাই। এই আইন সেই শরণার্থীদের জন্য প্রযোজ্য, যাঁরা বহু বছর এদেশে আছেন। নতুন কোনও শরণার্থী এই আইনের সুবিধে পাবেন না।
- ‘আজও পাকিস্তানে সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হন। পাকিস্তানে সংখ্যালঘুরা কীভাবে আছেন, সেটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরার সুযোগ ছিল। কিন্তু বিরোধীরা রাজনৈতিক স্বার্থে সেই সুযোগও হাতছাড়া করল।
- অনুপ্রবেশকারীরা ভয় পাচ্ছে, ওদের আসল চেহারা সামনে আসবে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কারও নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য নয়। এই আইন নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য। এই আইনের ভাবনা মহাত্মা গাঁধীর ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে। যাঁরা আজও গাঁধী পদবির ফায়দা তুলছেন, তারা শুনুন।
- মমতা দিদি সোজা কলকাতা থেকে রাষ্ট্রসঙ্ঘে পৌঁছে গেছেন। কিন্তু কয়েকবছর আগে তিনিই সংসদে বলতেন, অনুপ্রবেশকারীদের আটকানোর কথা। তিনিই বলতেন শরনার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা। মমতা দিদি, হঠাৎ আপনার কী হল? ‘হঠাৎ আপনি বদলে গেলেন কেন? বাংলার নাগরিকদের ওপর থেকে আপনার ভরসা উঠে গেল কেন? আপনি কাদের বিরোধিতা করছেন, আর কাদের সমর্থন করছেন। সেটা গোটা দেশের মানুষ দেখছেন।
- আগে প্রকাশ কারাটও বলেছিলেন শরণার্থীদের সাহায্যের কথা। আজ ওঁদের আসল চেহারাটাও সামনে আসছে। কেউ কেউ বলছেন, আমি নিজের রাজ্যে আইন লাগু করব না। আগে নিজেদের রাজ্যের আইনজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলুন। কেন নিজেদের হাস্যষ্পদ করে তুলছেন?