নয়াদিল্লি: জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের পর পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে সমুদ্রপথে নজরদারি বাড়াল নৌসেনা।
বাহিনী সূত্রে খবর, দেশের সবকটি নৌ-ঘাঁটিগুলিতে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে। বিশেষ করে দেশের পশ্চিম উপকূল-- আরবসাগরে ভাসমান রণতরীগুলিকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উদ্ভূত কূটনৈতিক টানাপোড়েনের প্রেক্ষিতে নজরদারি নিশ্ছিদ্র করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে দেশের উপকূলরক্ষী বাহিনীকেও। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, নৌসেনার পাশাপাশি, স্থলসেনা ও বায়ুসেনাকেও হাই অ্যালার্টে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চলতি সপ্তাহেই, সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ ২টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করেছে ভারত। প্রস্তাবে ছাড়পত্র মিলেছে সংসদে। রাজ্যসভা এবং লোকসভা দুই কক্ষেই পাস হয়ে গিয়েছে জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল। মিলেছে রাষ্ট্রপতির সম্মতিও।
ভারতের এই সিদ্ধান্তকে একতরফা ও অবৈধ বলে রাষ্ট্রপুঞ্জে নালিশ জানায় পাকিস্তান। যদিও, রাষ্ট্রপুঞ্জ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কাশ্মীর দ্বিপাক্ষিক ইস্যু। সেই বিষয়ে হস্তক্ষেপ অনৈতিক। একই মন্তব্য করে পাকিস্তানকে এড়িয়ে গিয়েছে তাদের শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষার বন্ধু চিনও।
এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক মহলে মুখ পুড়ে কার্যত কোণঠাসা হওয়ার পর সীমান্তে ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে পাকিস্তান। প্রথমে একতরফাভাবে বৃহস্পতিবার সমঝোতা এক্সপ্রেস বন্ধ করে ইসলামাবাদ। শুক্রবার থর এক্সপ্রেস বন্ধ করে দিল তারা। পাশাপাশি পাকিস্তানে ভারতীয় ছবির প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এখানেই থেমে না থেকে পাকিস্তান ইতিমধ্যেই ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনারকে বহিষ্কার করেছে। দিল্লিতে নিযুক্ত তাদের হাই কমিশনারকেও দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে পাকিস্তান। ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যও বন্ধ করে দিয়েছে ইসলামাবাদ।
শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কে ছেদ টানাই নয়, চিরাচরিত সন্ত্রাসের পন্থাও অবলম্বন করছে পাকিস্তান বলেও গোয়েন্দা সূত্রে খবর। জানা গিয়েছে, জম্মু কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলার পরিকল্পনা পাক ব্যাট ও জঙ্গিদের। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, জম্মু কাশ্মীরের সুন্দরবেনি সেক্টরে হামলা চালাতে পারে পাক ব্যাট।
পাক সেনার পাশাপাশি, ভারত-পাক সীমান্তে জঙ্গিরাও জড়ো হয়েছে বলে খবর মিলেছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে খবর, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের তিনটি জায়গায় জড়ো হয়ে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে লস্কর ও জইশ জঙ্গিরা। জঙ্গি হামলার সতর্কতায় হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
এর আগে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে পুলওয়ামাকাণ্ডের পর দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার সময়ও একইভাবে নৌসেনাকে হাই অ্যালার্টে রাখা হয়েছিল। সেই সময় বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রমাদিত্য, পরমাণু সাবমেরিন আইএনএস চক্র ছাড়াও নৌসেনার আরও ৬০টি রণতরী এবং প্রায় ৮০টি বিমান এই মুহূর্তে উত্তর আরবসাগরে মোতায়েন করা হয়েছিল।
পুলওয়ামাকাণ্ডের ঠিক ১২ দিনের মাথায় পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোট সেক্টরে পাল্টা অভিযান চালিয়ে সেখানে একাধিক জঙ্গিগোষ্ঠী জয়েশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণ শিবির ধ্বংস করে ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান। পরের দিনই, কাশ্মীরে ভারতীয় সেনা ছাউনি লক্ষ্য করে হামলা চালানোর চেষ্টা করে পাক বায়ুসেনা। কিন্তু, আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল ভারত। ভারতীয় বিমানের তাড়া খেয়ে পিছিয়ে যায় পাক বিমান। তার মধ্যেই ভারতের একটি মিগ-২১ বাইসন বিমান ধ্বংস হয়ে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে গিয়ে পড়ে। পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করে পাক প্রশাসন। তিনদিন পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।