নয়াদিল্লি: পিক-আপ ভ্যান ভর্তি করে গোমাংস পাচার করা হচ্ছিল, এই অভিযোগে বেধড়ক মারা হল এক যুবককে। ঘটনাটি ঘটেছে হরিয়ানার গুরুগ্রামে। বীভৎস গণপিটুনির শিকার হলেন লুকমান নামে বছর পঁচিশের এক যুবক। স্বঘোষিত  গো-রক্ষকদের হিংস্র মারধরে তাঁর মাথার খুলি ফেটে গিয়েছে। অভিযোগ, ঘটনাস্থলে ১৫ জন পুলিশকর্মী দাঁড়িয়ে থাকলেও, তাঁরা কোনও পদক্ষেপ করেননি। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে কখনও দেখা যাচ্ছে, পা মুড়ে বসে থাকা লুকমানকে লোকজন মুখে লাথি, চড় ও ঘুঁষি মারছে। তাঁকে হাতুড়ি দিয়েও আঘাত করা হয় বলে অভিযোগ। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, লুকমান পুলিশকে কাতর স্বরে বাঁচানোর অনুরোধ করছেন, কিন্তু পুলিশকর্মীরা নির্বিকারভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। এমনকী, পুলিশের গাড়ি থেকেই লুকমানকে টেনে নামিয়ে প্রহারের চেষ্টা করছে গো-রক্ষকরা, এমন ছবিও দেখা গিয়েছে।


প্রসঙ্গত,কয়েক বছর আগে দিল্লির কাছে নয়ডার দাদরিতে গো-মাংস পাচারের অভিযোগে এক যুবককে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিল উত্তেজিত জনতা। সেবারও পুলিশের বিরুদ্ধে নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার অভিযোগ উঠেছিল। এবার লুকমানকে দুই দফায় পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলা হয়। অবশেষে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ। অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে ঠিকই, তবে নিয়মরক্ষা করে মোটে একজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া যুবকের নাম প্রদীপ। বয়স ২৬ বছর। গো-রক্ষকদের কথা শুনে ভ্যানে থাকা মাংস পরীক্ষার জন্য তৎপরতার সঙ্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

পিক-আপ ভ্যানের মালিক তাহির জানিয়েছেন, গাড়িতে গরু নয়, মহিষের মাংস ছিল। তাঁরা গত পঞ্চাশ বছর ধরে এই ব্যবসা করছেন। আর লুকমানও বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল মাংস সরবরাহ করে আসছেন। তাহিরের অনুমান, ইদের মরশুমে সাম্প্রদায়িক অসন্তোষ তৈরির জন্যই কিছু লোক ইচ্ছাকৃতভাবে এই হামলা চালিয়েছে। এসিপি সন্দীপ মালিক অবশ্য জানিয়েছেন এখনও পর্যন্ত এর মধ্যে গোষ্ঠী সংঘর্ষ তৈরির কোনও ষড়যন্ত্রের তথ্য তাঁরা পাননি। তবে তদন্ত চলছে।

জানা যাচ্ছে, গুরুগ্রামের জামা মসজিদের কাছে একটি দোকান থেকে মাংস নিয়ে তাহির কুরেশি নামে একজনের দোকানে ডেলিভারি দিতে যাচ্ছিলেন লুকমান। তাড়া করে পিক-আপ ভ্যানকে পাকড়াও করে গো-রক্ষা বাহিনীর যুবকরা। গাড়ির চালক লুকমানকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বেধড়ক প্রহার শুরু করে। তাঁদের অভিযোগ, ভ্যানে গো-মাংস পাচার করছিলেন লুকমান। ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছয় পুলিশ। তাঁদের সামনেই চলে বেধড়ক মার। প্রায় অজ্ঞান লুকমানকে এরপর পিক আপ ভ্যানে তুলে বাদশাপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় দ্বিতীয় দফার প্রহারের জন্য। এত কান্ডের পর পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে থামিয়ে লুকমানকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।