মুম্বই: জাত তুলে খোঁটা দেওয়ার জেরে জুনিয়র সহকর্মীর আত্মহত্যার ঘটনায় গতকালের পর এখানকার এক সরকারি হাসপাতালের আরও ২ ডাক্তার গ্রেফতার হলেন আজ। পুলিশ বুধবার জানিয়েছে, সব মিলিয়ে ধৃত তিনজনই মহিলা। গতকাল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার হন ভক্তি মেহেরে। আজ ভোরে গ্রেফতার করা হয় হেমা আহুজা ও অঙ্কিতা খান্ডেলওয়াল নামে বাকি দুজনকে। ডিসিপি (জোন থ্রি) অবিনাশ কুমার বলেন, পুণে ও মুম্বই থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের আজই পরে আদালতে তোলা হবে।
তিনজনকে মুম্বইয়ের বি ওয়াই এল নায়ার হাসপাতালে তাঁদের ২৬ বছর বয়সি জুনিয়র সহকর্মী পায়েল তাডভি আত্মহত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। গত বুধবার পায়েল নিজের হস্টেলের ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তফসিলি উপজাতিভুক্ত বলে ওই ডাক্তাররা পায়েলের জাত তুলে কটাক্ষ, বিদ্রূপ ও র‌্যাগিং করেছেন বলে দাবি তাঁর পরিবারের। তাঁদের তফসিলি জাতি ও উপজাতি (দমনপীড়ন রোধ) আইন, -দমন আইন, তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের নানা ধারা ও ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৬ (আত্মহত্যায় প্ররোচনা) আইনে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনজনই মঙ্গলবার এখানকার দায়রা আদালতে আগাম জামিনের আবেদন জানান। তাঁরা এ ঘটনায় ‘ন্যয় বিচার’ চেয়েছেন। মহারাষ্ট্র অ্যাসোসিয়েশন অব রেসিডেন্ট ডক্টর্স-কে চিঠি লিখে বলেছেন, কলেজ এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ, সঠিক তদন্ত করে তাঁদের ‘ন্যয় বিচার’ দিক। অ্যাসোসিয়েশন ইতিমধ্যে তাঁদের সাসপেন্ড করেছে।
গতকাল পায়েলের অভিভাবকরা মুম্বইয়ের ওই হাসপাতালের বাইরে তিন সিনিয়র ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। প্রতিবাদে যোগ দেয় বঞ্চিত বহুজন আঘাদি, আরও নানা দলিত ও আদিবাসী-উপজাতি সংগঠন।
পায়েলের মা জানতে চান, তাঁর মেয়ের মতো উচ্চশিক্ষার অধিকারী হতে আসা মেয়েদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কি সরকার নেবে। তিনি বলেন, পায়েল বলত, কী ধরনের অপমান-নিগ্রহ সয়েছে। তুচ্ছ কারণে রোগীদের সামনেই ওর মুখের ওপর ফাইল ছুঁড়ে মারত ওরা। কিন্তু নির্যাতন সত্ত্বেও ও সিনিয়রদের নামে লিখিত অভিযোগ জানাতে বারণ করত ওদের কেরিয়ারে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে বলে।
পায়েলের ক্ষুব্ধ মা বলেন, তাঁদের সম্প্রদায় থেকে প্রথম এমডি হতে পারত তাঁর মেয়ে। পায়েলের ডাক্তার-স্বামীর সন্দেহ, পায়েলকে ওই তিন মহিলা ডাক্তাররা খুন করেও থাকতে পারেন।
রাজ্য মহিলা কমিশন এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নোটিস দিয়েছে, মু্ম্বইয়ের পুলিশ কমিশনারকেও চিঠি লিখে বিস্তারিত তদন্ত চেয়েছে।
মুম্বই কংগ্রেসের দাবি, অভিযুক্ত তিন ডাক্তারেরই ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচার হোক। তাডভির আত্মহত্যা দুর্ভাগ্যজনক, গুরুতর ব্যাপার বলেছে তারা।