ঢাকা: বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলায় ওড়াকান্দি মন্দিরে পুজো দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে এই মন্দিরের গুরুত্ব অপরিসীম। মতুয়াদের একটা বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। মতুয়া সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান ওড়াকান্দি। মতুয়া ধর্মমতের প্রবক্তা হরিচাঁদ ঠাকুর। এখানে এই মন্দির দ্বাদশ শতকে গড়ে ওঠে বলে ঐতিহাসিকরা জানিয়েছেন। হরিচাঁদ মন্দিরে পুজো দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঠাকুর পরিবারের সদস্য ও মতুয়া প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলেন।
নমঃশুদ্র সম্প্রদায়ের অংশ মতুয়াদের একটা বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ার বাসিন্দা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনার মোট ৫০ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৩২-৩৩ টিতে মতুয়া ভোট অনেকটাই একটা ফ্যাক্টর। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন চলাকালে ওড়াকান্দিতে মোদির এই সফর রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
মতুয়াদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি বহু বছর ধরে এখানে আসার সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। ২০১৫-তে বাংলাদেশ সফরের সময়ও আমি ওড়াকান্দিতে আসতে চেয়েছিলাম। আজ সেই ইচ্ছা পূরণ হল।
মোদি তাঁর ভাষণে বলেছেন, হরিচাঁদজির দেখানো পথে চলে আজ আমরা এক সমান ও সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজের দিকে এগোচ্ছি। তখনকার সময়ে দাড়িয়ে মহিলাদের জন্য শিক্ষা ও সামাজিক অংশীদারীত্বের জন্য জোর দিয়েছিলেন। আজ আমরা মহিলা সশক্তিকরণে জোর দিয়েছি।
তিনি বলেন, নারী শিক্ষার প্রসারে হরিচাঁদ ঠাকুরের অবদান অপরিসীম। সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নে হরিচাঁদ ঠাকুরের ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেছেন, হরিচাঁদ ঠাকুর ভবিষ্যত দ্রষ্টা ছিলেন। তিনি বলেছেন, আজ হরিচাঁদ ঠাকুরের শিক্ষা পড়লে মনে হয় উনি ভবিষ্যত কালকে আগেই দেখেছিলেন। উনার কাছে অলৌকিক দিব্য ক্ষমতা ছিল।হরিচাঁদ ঠাকুরের জীবন আমাদের আরেকটি শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি ঈশ্বরীয় প্রেমের কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে অতাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও একধরনের সাধনা। আজ লক্ষ লক্ষ অনুগামী তাঁর দেখানো পথে চলেছেন। পরাধীনতার সেই সময়েও তিনি সমাজকে বলেছিলেন আমাদের বাস্তবিক প্রগতির রাস্তা কী। আজ দুই দেশ অভিন্নতার মন্ত্রে এগোচ্ছে।
মোদি বলেছেন, ঠাকুরনগরে বড়মার স্নেহ পেয়েছেন। উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের আগে ঠাকুরনগরে গিয়ে বড়মার সঙ্গে দেখা করেছিলেন মোদি।
নরেন্দ্র মোদির গলায় শোনা গেল বনগাঁ-র বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের প্রশংসা। তিনি বললেন, মতুয়াদের ঐতিহ্য বহন করছেন শান্তনু। মোদি বলেছেন, বয়সে ছোট হলেও শান্তনুর কাছ থেকে শেখেন। তিনি বলেছেন, হরিচাঁদের ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে চলা শান্তনু ঠাকুর ভারতের সংসদে আমার সহযোগী। আমার থেকে বয়সে ছোট। কিন্তু আমি উনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখি। কারণ উনি হরিচাঁদজির মহান শিক্ষা নিজের জীবনে প্রয়োগ করেছেন। উনি কর্মঠ। দিনরাত পরিশ্রম করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারত থেকে ওড়াকান্দিতে যে তীর্থযাত্রীরা আসবেন, তাঁদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে।মোদি জানান, বাংলাদেশে মেয়েদের স্কুলগুলির মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করবে ভারত। বাংলাদেশে ভারত প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি করবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, নিজেদের অগ্রগতির মাধ্যমেই সমগ্র বিশ্বের অগ্রগতি দেখতে চায় ভারত ও বাংলাদেশ। দুই দেশই চায় বিশ্বে অস্থিরতা, সন্ত্রাস ও অশান্তির পরিবর্তে স্থিতিশীলতা, ভালোবাসা ও শান্তির পরিবেশ গড়ে উঠুক। এই শিক্ষাই হরিচাঁদ ঠাকুর আমাদের দিয়েছিলেন। আজ সমগ্র বিশ্ব যে মূল্যবোধের কথা বলে, তার জন্য হরিচাঁদজি নিজের জীবন উতসর্গ করেছেন।
মোদি বলেছেন, এখানে আসার আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সমাধিসৌধে গিয়েছিলাম। সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছি।আজ যেভাবে ভারত-বাংলদেশের সরকার দুদেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করছে, সামাজিক ভাবে এই কাজই ঠাকুরবাড়ির বার্তা বহুকাল ধরে করে আসছে।এই স্থান ভারত-বাংলাদেশের আত্মিক সম্পর্কের তীর্থক্ষেত্র।এদিন ভাষণের শেষে মোদির গলায় ‘জয় বাংলা’র পাশাপাশি ‘জয় হরিবোল’ ধ্বনিও শোনা গেল।