বেঙ্গালুরু: ভগবান বৃদ্ধ হন না কিছুতেই।

সময় যত এগোয় তত বটগাছের শেকড়ের মত প্রসারিত হয় তাঁর ক্রিকেট ব্যাট, খুঁজে নেয় প্রাণরস মাটি আঁকড়ে থেকে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আরও একবার দেখিয়ে দিলেন ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁর বিকল্প এখনও আসেননি। অসংখ্যবারের মত আরও একবার তাঁর ব্যাটে ভর করে আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের কাছ থেকে অবিশ্বাস্য জয় চিনিয়ে নিতে চলেছিল চেন্নাই সুপার কিংস। কিন্তু ম্যাচের শেষ বল তফাত গড়ে দিল।

১৬২-র লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শেষ ওভারে কার্যত অসম্ভব ২৬ রান তুলতে হত চেন্নাইকে। বল করছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পোড়খাওয়া পেসার উমেশ যাদব। আর ৩৭ বছরের ধোনি দেখিয়ে দিলেন, অসম্ভব বলে কিচ্ছু নেই, শুধু যদি  ভাগ্য বিরূপ না থাকে। ৩টে ছয় আর ১টা চার মেরে ম্যাচ নিজেদের দিকে টেনেই এনেছিলেন ক্যাপ্টেন হিসেবে ভারতীয় ক্রিকেটে সর্বাধিক সাফল্য পাওয়া এই ক্রিকেটার। শেষ বলে দরকার ছিল মাত্র ২ রান। মারাত্ম মানসিক চাপে পড়ে যাওয়া উমেশ স্লোয়ার দিলেন। আর ক্রিকেট ফ্যানদের হতবাক করে দিয়ে বলটা মিস করলেন সেই ধোনি। নন স্ট্রাইকার শার্দুল ঠাকুর রান নেওয়ার জন্য ক্রিজ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁকে আউট করলেন পার্থিব প্যাটেল।

দলকে ম্যাচ জেতাতে না পারলেও ধোনির ৪৮ বলে অপরাজিত ৮৪ রান ভুলতে পারবেন না ক্রিকেট প্রেমিকরা। শেষদিকে লড়াই হয়ে উঠেছিল কার্যত গোটা ব্যাঙ্গালোর টিম বনাম মহেন্দ্র সিংহ ধোনির। সব মিলিয়ে ৭টা ছয় মেরে একা একাই বিরাট কোহলিদের কোর্টে লড়াইটা পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।

অথচ চেন্নাইয়ের ব্যাটিং দেখে প্রথমে মনে হচ্ছিল না এভাবে ম্যাচের রং বদলে যাবে। আরসিবি-র বোলিংয়ে প্রয়োজনীয় তীক্ষ্ণতা নিয়ে এসেছেন ডেল স্টেইন, ২৯ রানে ২টি উইকেট পান তিনি। তাঁর হাতে প্রথম আউট শেন ওয়াটসন, স্লিপে তিনি ধরা পড়েন মার্কাস স্টোইনিসের হাতে। এরপর নিখুঁত ইয়র্কারে স্টেইন তুলে নেন ফর্মে না থাকা সুরেশ রায়নাকে, ০ রানে। ২ উইকেট পান উমেশ যাদবও, ফাফ ডে প্লাসিস (৫) ও কেদার যাদবকে (৯) রানে আউট করেন তিনি। চেন্নাইয়ের স্কোর দাঁড়ায় ২৮ রানে ৪ উইকেট।

এরপর চেন্নাইয়ের হাল ধরেন ধোনি। প্রথমে নড়বড়ে থাকলেও পরে তাঁর সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করেন ২৯ বলে ২৯ রান করা অম্বাতি রায়াডু। ৫৫ রান করেন এই জুটি, এরপর রায়াডু আউট হয়ে যান যজুবেন্দ্র চাহালের বলে। বেশিক্ষণ টেকেননি রবীন্দ্র জাডেজাও, ১১-য় রান আউট হয়ে যান। ১০৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে গভীরতর গাড্ডায় পড়ে যায় সিএসকে। কিন্তু একা কুম্ভ ধোনি একাই লড়াই টেনে নিয়ে যান শেষ বল পর্যন্ত।

ব্যাটিং অবশ্য ভাল হয়নি ব্যাঙ্গালোরেরও। পার্থিব প্যাটেলের আক্রমণাত্মক অর্ধশতরান ও মইন আলি ১৬ বলে ২৬-এ ভর করে ৭ উইকেট খুইয়ে মাত্র ১৬১ রান তুলতে পারে তারা। পার্থিব ৩৭ বলে ৫৩ করেন, এবি ডি ভিলিয়ার্স করেন ১৯ বলে ২৫ ও অক্ষদীপ নাথ ২০ বলে ২৪। বিরাট কোহলি গোটাদুয়েক বাউন্ডারি মারলেও নিজের ৯ রানের মাথায় চাহারের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে যান। চেন্নাইয়ের হয়ে ২৫ রানে ২ উইকেট পান দীপক চাহার, রবীন্দ্র জাডেজা পান ২৯ রানে ২ উইকেট। ডয়েন ব্র্যাভোও তুলে নেন ৩৪ রানে ২ উইকেট।