নয়াদিল্লি: শুরুটা বায়ুসেনার ফ্লাই-পাস্ট দিয়ে। শেষ হল দিল্লির রাজপথে তেরঙা বেলুন উড়িয়ে। বর্ণাঢ্য ট্যাবলো থেকে সামরিক কুচকাওয়াজ-- মহা ধুমধামের সঙ্গে রাজধানীতে পালিত হল ৭১ তম প্রজাতন্ত্র দিবস।
প্রতিবছরের মতো এবছরও রাজধানী দিল্লির রাজপথে আয়োজিত হয় বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজের। প্রতিবছর কোনও বিদেশি রাষ্ট্রনেতা প্রধান অতিথি হিসেবে আসেন। এবছরও তার অন্যথা হয়নি। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ের মাসিয়াস বোলসোনারো এবছর প্রধান অতিথি হিসেবে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শেষবার, ২০০৪ সালে ব্রাজিলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা এসেছিলেন প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি হিসেবে।
রাজপথে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই সেখানে পৌঁছে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর আগে, তিনি জাতীয় ওয়ার মেমোরিয়ালে গিয়ে বীর শহিদদের ফলকে শ্রদ্ধা জানান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত এবং তিন বাহিনীর প্রধান।
পরে, রাজপথে পৌঁছে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধান অতিথিকে অভ্যর্থনা জানান মোদি। রাষ্ট্রপতি তেরঙা উত্তোলন করেন। সেই সময় ২১ তোপধ্বনি দিয়ে তা স্বাগত জানানো হয়।
প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে আজ রাজপথে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পদাধিকারী সহ তাবড় তাবড় ভিভিআইপি-রা। উপস্থিত দেশ-বিদেশের বহু বিশিষ্ট অতিথিরা। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রের প্রায় সব মন্ত্রী ও বিরোধী নেতা-নেত্রীরাও। এরপর শুরু হয় বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ।
প্রথমে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ফ্লাই পাস্ট। তিন বাহিনীর পতাকা নিয়ে আকাশে উড়তে দেখা যায় বিমান বাহিনীর চারটি হেলিকপ্টারকে। এরপর কুচকাওয়াজ হয়। এই প্রথমবার কুচকাওয়াজে অংশ নেয় সিগনাল কোর স্কোয়াড। নেতৃত্বে ক্যাপ্টেন তানিয়া শেরগিল। ফ্লাই পাস্টে এই প্রথম বার অংশ নেয় চিনুক ও অ্যাপাচে হেলিকপ্টার। এছাড়াও, ছিল সেনা ও নৌ বাহিনীর ট্যাবলো, সিআরপিএফ-এর মহিলা জওয়ানদের ডেয়ারডেভিলস টিম, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও বিএসএফের উট বাহিনী।
কুচকাওয়াজের শুরুতে দেখা যায় ভারতীয় সেনার টি-৯০ ভীষ্ম যুদ্ধট্যাঙ্ক। এরপর এক এক করে আসে অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার, রুদ্র ও ধ্রুব। শিখ লাইট ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের মার্চপাস্ট হয়। কোর অফ সিগন্যাল-এর মার্চপাস্ট হয়। তাকে নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন তানিয়া শেরগিল। এরপর ভারতীয় নৌসেনা তার শক্তি-প্রদর্শন করে। বোয়িং পি৮আই লং রেঞ্জ মেরিটাইম প্যাট্রল এয়ারক্র্যাফট ও কলকাতা ক্লাস ডেস্ট্রয়ার ও কলাবরী ক্লাস সাবমেরিনের মডেল প্রদর্শিত হয়। কোচিনে তৈরি হচ্ছে বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত। তাও তুলে ধরা হয়। দেখা যায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উট রেজিমেন্ট।
এরপর এক এক করে আসে কেন্দ্রের বিভিন্ন ট্যাবলো। আসে বিভিন্ন রাজ্যের সুসজ্জিত ট্যাবলো। তারপর আসে বায়ুসেনার পালা। প্রথমে দিল্লির আকাশ চিরে বেরিয়ে যায় সুখোই-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান। আজকের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের প্রধান আকর্ষণ ছিল ডিআরডিও-র অ্যান্টি-স্যাটেলাইট মিসাইল (এস্যাট)। তা সকলের সামনে তুলে ধরা হয়।
এরপর ভারতীয় বায়ুসেনার চিনুক ও অ্যাপাচে হেলিকপ্টার মাঝ-আকাশ দিয়ে পাড়ি দিয়ে সকলকে মোহিত করে। এই প্রথম অ্যাপাচে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিল। সব শেষে তেরঙা বেলুন উড়িয়ে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান শেষ করা হয়।
এদিন, রাজধানী জুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একপ্রকার, বহু-স্তরীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা বলবৎ করা হয়েছে। রাজপথ থেকে লাল কেল্লা-- এই আট কিলোমিটার রাস্তার চারপাশ ঘিরে ফেলা হয়েছে। বহুতলের ওপর স্নাইপার্স ও শার্প-শ্যুটার্সদের মোতায়েন করা হয়েছে। ১০ হাজারের বেশি নিরাপত্তারক্ষী আজ মোতায়েন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, বহু সংখ্যক ড্রোন ও কয়েক’শ সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি রাখা হবে। মোতায়েন করা হয়েছে অ্যান্টি-এয়ারক্র্যাফট গান। রয়েছে ফেসিয়াল রিকগনিশন ডিভাইস।