কলকাতা: প্রয়াত রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কালীপুজোর দিন ৯.২২ মিনিটে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় তৃণমূলের বর্ষীয়ান এই নেতার। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা শুনেই বাড়ির কালীপুজো ছেড়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে তিনি জানিয়ে দেন, "সুব্রতদার শেষ যাত্রায় আমার থাকা সম্ভব নয়। সুব্রতদার দেহ আমার পক্ষে দেখা সম্ভব নয়।"  


হাসপাতালের বাইরে এসে মুখ্যমন্ত্রীকে ম্রিয়মাণ দেখায়। মমতা বলেন, "আমি অনেক দুর্যোগ দেখেছি। কিন্তু সুব্রতদার মৃত্যু আমার কাছে অনেক বড় দুর্যোগ। আমি কিছু বলার মত পরিস্থিতিতে নেই। এত হাসিখুশি একজন মানুষ। পরিবার, নিজের বিধানসভা কেন্দ্র, দল, ক্লাব অন্তঃ প্রাণ একজন মানুষ। আর কেউ এমন হবে না। আমি গোয়া থেকে ফিরেই হাসপাতালে আসি। সেদিনও আমার সঙ্গে দেখা হল, হাসল। বলল আমি আবার জেলায় জেলায় যাব। সন্ধ্যেয় বলল ভাল আছেন। কালকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যেই বিরাট হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেল। কিছু করা গেল না।"



এদিন কথা বলতে গিয়ে কিছুটা শোকবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন মমতা। তিনি বলেন, "কিছুদিন আগে দার্জিলিংয়ে গিয়েও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কোনমতে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। আজকে মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে গিয়ে পিস ওয়ার্ল্ডে রাখা হবে। কাল ১০টা থেকে ২টো পর্যন্ত রবীন্দ্র ভবনে শায়িত থাকবে দেহ। যারা শেষ দেখতে চান সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানান হবে। সেখান থেকে বাড়িতে যাবে, ক্লাবে যাবে দেহ। আমি সেখানে থাকব না।" 


উল্লেখ্য, সাতের দশকে বঙ্গ রাজনীতির তিন দামাল ছেলের সোনালী অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল...সুব্রত মুখোপাধ্যায়। আদতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজের সারেঙ্গাবাদের ছেলে। ৬-এর দশকে পড়তে এলেন কলকাতায়। অ্যানথ্রোপলজিতে Bsc নিয়ে ভর্তি হলেন বঙ্গবাসী কলেজে। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্কিওলজি-তে মাস্টার্স। এরপর পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিপ্লোমা মিউসিওলজি বা মিউজিয়াম স্টাডিজে। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের কেউ কোনওদিন রাজনীতির ধারেকাছে ছিলেন না৷ বাবা ছিলেন শিক্ষক৷  সুব্রতর জীবনের মোড় ঘোরানো সময় এল ১৯৭১-এর বিধানসভা নির্বাচনে। এই শুরু রাজনৈতিক জীবনের পথচলা।


গত ররিবার এসএসকেএমে চেক আপ করাতে গিয়ে আরও অসুস্থ বোধ করেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁকে ভর্তি করা হয় এসএসকেএমে। একসপ্তাহ ধরে ICCU-তে কাটানোর পরে শেষ হল জীবনের সঙ্গে লড়াই।সকলকে চির বিদায় জানালেন বঙ্গ রাজনীতির চিরসবুজ ব্যক্তিত্ব সুব্রত মুখোপাধ্যায়।