কলকাতা ও হাওড়া: হনুমান চল্লিশা পাঠ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ায় বাড়িওয়ালা ও প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে হুমকি ও মানসিক চাপ সৃষ্টির অভিযোগ তিন তালাক বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ ইশরত জাহানের।
সুপ্রিম কোর্টে তাৎক্ষণিক তিন তালাক আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন হাওড়ার পিলখানার বাসিন্দা ইশরত জাহান। ২০১৫ সালে দুবাই থেকে স্বামী ফোনেই তিন তালাক দেন বলে অভিযোগ ইশরতের। তারপর এই প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই। সর্বোচ্চ আদালতে জয়। নিষিদ্ধ হয় তিন তালাক প্রথা। বছর দু’য়েক আগে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। সেই ইশরত জাহানকে ঘিরেই এবার নতুন বিতর্ক।
ইশরতের দাবি, গত মঙ্গলবার গোলাবাড়ি এলাকায় হনুমান চল্লিশা পাঠ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এরপর থেকেই বাড়িওয়ালা ও তাঁর শ্যালক বাড়ি ছাড়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। এমনকী মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
ইশরত জাহান বলেন, আমি একা থাকি তাই আমাকে নির্যাতন করা হচ্ছে। এটা কোনও রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠান নয়। আমি স্থানীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলাম। ওরা বলছে নাকাব পরে গেছিলাম। আমি নাকাব পড়ে যাই আর নাই বা যাই, আমি তো ইসরাত জাহান। সব দলে হিন্দু-মুসলিম থাকে। আমি কী করব তা আমার ব্যাপার। অনেকেই তো হিন্দুদের অনুষ্ঠানে যান। আমিও তাই গিয়েছিলাম।
ইশরত আরও বলেন, আমি মনে করি আমি একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশে বাস করি। আর যে কোনও পবিত্র অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। ইশরতের মতে, তিনি দেশের একজন ভাল নাগরিক হিসেবে তাঁর কর্তব্য পালন করেছেন। বলেন, আমি ধর্মনিরপেক্ষ। তা সত্ত্বেও প্রাণনাশের আশঙ্কা করছি।
বুধবার বাড়িওয়ালা, শ্যালক ও প্রতিবেশীদের নামে গোলবাড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ইশরত জাহান। দাবি করেন, বুধবার যখন ছেলেকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরছিলেন, সেই সময় শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দা তাঁকে ঘিরে হুমকি দেন। যদিও, ভয় দেখানোর কথা অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। তাঁরা পাল্টা দাবি করে বলেন, আমারা ওকে ভয় দেখাইনি। তিন চার জন মিলে গিয়েছিলাম। আমরা শুধু বলেছি ও কেন হিজাব পড়ে হনুমান চল্লিশা পাঠে গেছিল? কোনও ভয় দেখানো হয়নি।
হাওড়া উত্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা জাকারিয়া জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ করেছেন ইশরত। কী হয়েছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, ইশরত জানিয়েছেন, তাঁর প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তাই তিনি নিরাপত্তা চেয়েছেন।
এই ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপি রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেছেন, প্রতি বছর ইদের প্রার্থনায় মুখ্যমন্ত্রী অংশ নিলে কোনও সমস্যা নেই। তাহলে হনুমান চল্লিশায় অংশ নেওয়ার জন্য ইশরতকে কেন হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এর জন্য মানবাধিকার ও নারী অধিকার -- দুই-ই লঙ্ঘিত হচ্ছে।