শ্রীনগর: সন্ত্রাসদমন অভিযানে তিন জঙ্গির সঙ্গে আটক প্রেসিডেন্ট মেডেল প্রাপক জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের এক ডেপুটি সুপার পদের এক অফিসার। ধৃত অফিসারের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে দুটি একে ফরটি সেভেন ও পাঁচটি গ্রেনেড। এই ঘটনায় উপত্যকায় জোর চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, গতকাল দক্ষিণ কাশ্মীরে কুলগামের মির বাজারে একটি সন্ত্রাস দমন অভিযান চালাচ্ছিল জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ডিআইজি দক্ষিণ কাশ্মীর অতুল গয়াল। ওই অভিযানে পুলিশের একটি ব্যারিকেডের সামনে একটি গাড়ি থেকে ডিএসপি দেবেন্দ্র সিংহকে আটক করা হয়।
অভিযোগ, সেই সময় তাঁর সঙ্গে বসে ছিল এক শীর্ষস্থানীয় হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি। প্রসঙ্গত, ওই জঙ্গিও এক সময় পুলিশে অফিসার পদে কাজ করত। নাম নাভেদ আহমেদ শাহ ওরফে নাভেদ বাবু। এছাড়া আটক করা হয় রফি আহমেদ নামে আরও এক লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গিও।
পুলিশের দাবি, নাভেদ বাবুর অধীনে বর্তমানে অন্ততপক্ষে ৩০ জন জঙ্গি সক্রিয়ভাবে কাজ করে। উপত্যকায় এক ডজনের বেশি পুলিশকর্মী হত্যার নেপথ্যে সক্রিয়ভাবে জড়িত নাভেদ বাবু। কিন্তু, নাভেদের সঙ্গে পুলিশের কর্মরত উচ্চপদস্থ আধিকারিকের বিষয়টি জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের কাছে কম্পন ছড়িয়ে দিয়েছে।
সংসদে হামলা চালানো আফজল গুরুকে গ্রেফতার করেছিলন ধৃত পুলিশকর্তা। কিছুদিন আগে তিনি প্রেসিডেন্ট মেডেল পান। নয়ের দশক থেকে তিনি উপত্যকায় জঙ্গি-বিরোধী অভিযানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। ত্রালে ও শ্রীনগরের ইন্দিরানগর এলাকায় দেবেন্দ্রর বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। সেখান থেকে ৫টি গ্রেনেড ও ৩টি একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, দেবেন্দ্রর বিষয়ে একটা সন্দেহ ছিল। বেশ কিছুদিন ধরেই ওই ডিএসপির ওপর নজর রাখা হচ্ছিল। তাঁর বিষয়ে একাধিক রিপোর্ট জমা পড়েছিল। একাধিক তথ্যও উঠে আসছিল গোয়েন্দাদের কাছে। পুলিশ সূত্রে খবর, গতকাল ওই দুই জঙ্গির গতিবিধির খবর ছিল গোয়েন্দাদের কাছে। সেই মতো নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করা হয়। বিভিন্ন রাস্তায় চেকপয়েন্ট ও নাকা বসানো হয়। কিন্তু, জঙ্গিদের সঙ্গে একই গাড়িতে ডিএসপি থাকবেন, তা সম্ভবত ছিল কল্পনাতীত।
গোয়েন্দাদের কাছে খবর ছিল, গাড়িটি শ্রীনগর থেকে জম্মুর উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। সেই মতো ফাঁদ পাতা হয়। শনিবার বিকেল ৪টে নাগাদ গাড়িটিকে আটকানো হয়। সেখান থেকেই বমাল ধরা পড়ে চারজন। চতুর্থজন ওই গাড়ির চালক।
দেবেন্দ্রর বিরুদ্ধে অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি শোপিয়ান থেকে জঙ্গিদের উপত্যকার বাইরে নিরাপদ স্থানে পাঠাচ্ছিলেন। কাজিগুন্ড পুলিশ স্টেশনে তিনজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিল করা হয়েছে।
যদিও, অভিযুক্ত ডিএসপির দাবি, তিনি ওই দুই জঙ্গিকে আত্মসমর্পন করতে কথা বলতে ও বোঝাতে গিয়েছিলেন। এমনকী, এ-ও দাবি করেন, ওই জঙ্গিরা তাঁর কথায় আত্মসমর্পণ করতে রাজিও হয়েছে। যদিও, তেমন কথা স্বীকার করেনি জঙ্গিরা। দুজনই জানান, তারা দুমাসের জন্য জম্মুতে একটি শিবিরে যাচ্ছিল।
পুলিশের আরও দাবি, গাড়ির চালক ইরফান হচ্ছে মধ্যস্থতাকারী। গাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রই প্রমাণ দিচ্ছে, তারা কোনও বড় হামলার ছক কষছিল। পুলিশের অনুমান, প্রজাতন্ত্র দিবসের সময়ই কোনও নাশকতামূলক হামলার ছক কষেছিল জঙ্গিরা। এই গোটা ঘটনায় ধৃত ডিএসপির ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।