হায়দরাবাদ: নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে মাওবাদী ঘনিষ্ঠ কবি-লেখক ভারভারা রাওকে মহারাষ্ট্র পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে জানালেন তাঁর পরিবারের লোকজন। ভারভারার বাড়ি, তাঁর পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের বাড়িতেও পুনে থেকে পুলিশ বাহিনী গিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে বলে খবর। এঁদের মধ্যে এক সাংবাদিকও আছেন। ভারভারাকে মেডিকেল চেক আপের জন্য সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুনেতে নিয়ে যাওয়ার আগে তাঁকে এখানকার আদালতে তোলা হতে পারে।
পুলিশবাহিনী ভিমা কোরেগাঁওয়ের হিংসা, অশান্তির ব্যাপারে গত জুনে পুণেতে গ্রেফতার হওয়া ৫ জনের একজনের বাড়ি থেকে পুলিশ একটি চিঠি উদ্ধার করেছে বলে দাবি করে যাতে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে খুনের প্ল্যানের উল্লেখ ছিল। পুলিশ জানায়, চিঠিটি ‘আর’ বলে একজনের লেখা। তাতে লেখা ছিল, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর মতো একই কায়দায় হত্যা করতে হবে মোদীকে। এজন্য একটি এম-ফোর রাইফেল ও চার লক্ষ রাউন্ড কার্তুজ কিনতে ৮ কোটি টাকা চাই। সেই চিঠিতে ভারভারার নাম ছিল বলেও জানায় পুলিশ।
তবে বর্তমানে ‘বিরাসম’ নামে বিপ্লবী লেখক-শিল্পীদের একটি সংগঠনের নেতা ভারভারা দৃঢ়ভাবে নিজের বিরুদ্ধে মোদী হত্যার চক্রান্তে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। ভিমা কোরেগাঁওয়ের হিংসা মদত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ৫ জন সমাজের নিপীড়িতদের হয়ে লড়াই করেন বলে পাল্টা দাবি করেন তিনি।
এদিন মাওবাদী যোগসাজশের সন্দেহে ভারভারার পাশাপাশি দেশের কয়েকটি রাজ্যে আরও কয়েকজনের বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুণে পুলিশ। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পুণেতে ‘এলগার পরিষদ’ কর্মসূচির জেরে মহারাষ্ট্রের কোরেগাঁও-ভিমা গ্রামে অশান্তি, হিংসার তদন্তের অঙ্গ হিসাবে এই তল্লাশি চলে মঙ্গলবার। মু্ম্বইয়ে সমাজকর্মী অরুণ ফেরেইরা, ভার্নন গনজালভেস, ফরিদাবাদ ও ছত্তিশগড়ে ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী সুধা ভরদ্বাজ, দিল্লিতে নাগরিক অধিকার রক্ষা আন্দোলনকর্মী গৌতম নওলাখার বাসভবনে হানা দেয় পুলিশ। প্রায় সবাইকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
আজ দুপুরে নওলাখাকে তাঁর দিল্লির বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলে আদালতে হেবিয়াস কর্পাস পিটিশন জমা দেন তাঁর আইনজীবী। দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশ, আগামীকাল সকালে তারা বিষয়টির শুনানি করা পর্যন্ত মানবাধিকার কর্মী নওলাখাকে গ্রেফতার করা যাবে না। বিচারপতি এস মুরলিধর ও বিচারপতি বিনোদ গোয়েলের বেঞ্চ জানিয়েছে, নওলাখা পুলিশ প্রহরায় নিজের বাড়িতেই থাকবেন, তাঁকে তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে দিতে হবে।


এদিকে পুণে পুলিশের তল্লাশির তীব্র নিন্দা করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। সরব অরুন্ধতী রায় সহ অনেকেই। যদিও মহারাষ্ট্র পুলিশের দাবি, নকশাল যোগসূত্রের অভিযোগেই ভারতীয় দণ্ডবিধি ও বেআইনি কার্যকলাপ রোধ আইনের প্রাসঙ্গিক ধারায় ওদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

গত জুনে দলিত কর্মী সুধীর ধাওয়ালেকে তাঁর মুম্বইয়ের বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। প্রায়ই একই সময়ে হানা দিয়ে রোনা উইলসনকে তাঁর দিল্লির মুনিরকার ফ্ল্যাট থেকে পাকড়াও করে হয়। আইনজীবী সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, সমাজকর্মী মহেশ রাউত ও সোমা সেনকে গ্রেফতার করা হয় নাগপুর থেকে।
এক পুলিশ অফিসার আজ বলেন, এলগার পরিষদের ঘটনা নিয়ে তদন্তে বেশ কিছু নথি, প্রমাণ হাতে আসে যে, তার পিছনে একটি নিষিদ্ধ সংগঠন ছিল। সেই সূত্র ধরেই আজ তল্লাশি অভিযান হয় ছত্তিশগড়, মুম্বই ও হায়দরাবাদে।