বার্মিংহ্যাম: ক্রিকেট বিশ্বকাপে গতকাল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশ দলের সমর্থকদের একাংশ। ওই ম্যাচে ইংল্যান্ড ভারতকে ৩১ রানে হারিয়ে দিয়েছে। এই ম্যাচে ভারতীয় ব্যাটিং নিয়ে বহু প্রশ্নই উঠেছে। অধিনায়ক বিরাট কোহলিও স্বীকার করে নিয়েছেন, ব্যাটিং ভালো হলে খেলার ফলাফল আলাদা হতে পারত। আসলে এই ম্যাচে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ব্যাটিং নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে। শুধু অনুরাগীরাই নয়, বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, হার্দিক পান্ড্যর সঙ্গে ধোনি যদি রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করতেন তাহলে দলের ওপর এতটা চাপ পড়ত না।
শেষের কিছু ওভারে যখন ধোনি ও কেদার যাদব ক্রিজে ছিলেন তখন তাঁদের মধ্যে দ্রুত রান তোলার চেষ্টাই চোখে পড়েনি। ওই পরিস্থিতিতে দুজনের মন্থর ব্যাটিং দেখে কার্যত বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। টেলিভিশনে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন সৌরভ ও ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক নাসের হুসেন। দুজনেই ধোনি ও কেদারের ব্যাটিংয়ের সমালোচনা করেন।
শেষ ১০ ওভারে ধারাভাষ্য দিতে দেওয়ার সময় নাসের হুসেন বলেন, আমি খুবই আশ্চর্য, এটা কী হচ্ছে। ভারতের যেমন প্রয়োজন তাঁরা তেমনটা খেলছেন না। দ্রুত রান তোলা দরকার। কিন্তু তাঁরা কী করছেন? কিছু ভারতীয় সমর্থক তো গ্যালারি থেকে উঠে ফিরে যেতে শুরু করেছেন। ধোনি বড় শট খেলুন, এমনটাই ভারতীয় সমর্থকরা চাইছেন। এটা বিশ্বকাপের ম্যাচ এবং দুটো সেরা দলের খেলা চলছে। তাঁদের চেষ্টাটা অন্তত করা উচিত। তাঁরা আরও ভালো ব্যাটিং করুন,এমনটাই চাইছেন সমর্থকরা। সমর্থকরা এটাও চাইছেন, অন্তত লড়াই করে হারুক দল। জেতার চেষ্টা তো করা হোক।
নাসির হুসেনের এই বক্তব্যের কোনও জবাব সৌরভের কাছে ছিল না। শেষের ওভারগুলিতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মনোভাব নিয়ে তিনি নিজেও কার্যত হতভম্ব হয়ে যান। তিনি বলেন, আমার কাছেও এর ব্যাখ্যা নেই।
প্রত্যেক ওভারে যখন দরকার ১২ বা ১৩ রান করে, তখন ধোনি ও কেদার খুচরো রান নিয়ে খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বড় হিট হবে কি, চেষ্টাই তো ছিল না। ধোনি এবং কেদার দু’জনে মিলে ৩১ বল খেললেন। তার মধ্যে ৭টা বলে কোনও রান নেই, কুড়িটা এক রান, তিনটে চার এবং একটা ছয়। সৌরভ বলেছেন, এ ধরনের এক রান নেওয়ার কোনও ব্যাখ্যা তাঁর কাছে নেই।এটা ঠিক যে ইংরেজ বোলাররা খুব ভালো লাইন ও লেংথে বল করছেন। কিন্তু শেষের দিকে হাতে পাঁচ উইকেট থাকার পরও এ রকম ডট ও সিঙ্গল নেওয়ার কোনও ব্যাখ্যা তাঁর কাছে নেই। এটা পুরোটাই দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। বার্তাটা পরিষ্কার হতে হবে। বল বাউন্ডারিতে পাঠানোই এখন লক্ষ্য হওয়া উচিত। সে জায়গায় ডট বল বা সিঙ্গল নেওয়ার কোনও অর্থই নেই।
সৌরভ আরও বলেন, ড্রেসিংরুমেও প্রশ্ন উঠবে, মাঠে শেষপর্যন্ত কী করছিলে।
ম্যাচের শেষেও ৩০০-র বেশি রানের লক্ষ্য তাড়া করার ক্ষেত্রে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, প্রথম দশ ওভার ও শেষের ছয় ওভারে ভারতীয় দলের কিছু ত্রুটি হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, আশা করছি, ওরা ঘুরে দাঁড়াবে। কারণ, চলতি টুর্নামেন্ট ওরা খুব ভালো ফর্মে রয়েছে।
সৌরভ বলেছেন, ওই ওভারগুলিতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের উদ্দেশ্য সঠিক ছিল না। জয়ের চেষ্টা করে যদি দল ৩০০ রানে অল আউটও হয়ে যেত, তাহলেও ভালো লাগত। এ ধরনের পরিস্থিতি ফের আসতে পারে এবং সেই পরিস্থিতি উতরে যাওযার রণনীতি তৈরি করতে হবে।
শেষ ১০ ওভারে ভারতের জয়ের জন্য ১০৪ রানের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা শেষের দিকে দ্রুত রান তুলতে পারেননি। ধোনি বলে ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন। কেদার ১৩ বলে মাত্র ১২ রান করেন।