নয়াদিল্লি ও কলকাতা: সাংসদ পদ ছাড়ছি না। তবে সক্রিয় রাজনীতিতেও থাকছি না। জানালেন বাবুল সুপ্রিয়। তিনি জানিয়েছেন, রাজনীতি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হঠতে পারি না। অন্য কোনও দলেও যোগ দিচ্ছি না।


বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গে বৈঠকের পর জানালেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ।নাড্ডার সঙ্গে বৈঠকের পর এভাবে সাংসদ পদ ছাড়ার ঘোষণা করেও সুর বদল  করেন বাবুল। তিনি বলেন,  ‘সাংসদ হিসেবে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করব। আসানসোলের সাংসদ পদে ইস্তফা দিচ্ছি না। অমিত শাহ, নাড্ডাজি বুঝিয়েছেন।  রাজনীতি ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটছি না।’


তিনি বলেছেন, ‘নেতৃত্ব ও আসানসোল মানুষের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত বদল। ইস্তফা দিই, চায় না আসানসোলের মানুষ। কোথাও কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে থাকব না।  দলের জন্য কিছু বলার হলে বাইরে থেকেই বলব।  কোনও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে আর দেখা যাবে না। এখন উপ নির্বাচন হলে অনেক খরচ।’


এ ব্যাপারে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, যা বলেছি, সেটাই মিলে গেল। ইস্তফা নয় নাটক। এ তো শুধু কথার মারপ্যাঁচ।


বাবুল-অস্বস্তি কাটাতে তত্পর হয়েছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ইস্তফা দেওয়ার কথা বললেও এদিন সংসদে যাননি বাবুল। এদিন বাবুলকে নিয়ে বৈঠকে বসেন জেপি নাড্ডা।উল্লেখ্য, সূত্রের খবর, এর আগেই বাবুলকে ফোন করেন অমিত শাহ। তিনি বাবুলকে তাঁর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন বলে সূত্রের খবর।  জানা গেছে, গতকাল রবিবারও নাড্ডার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয় বাবুলের।  দীর্ঘক্ষণ নাড্ডার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সেও হয়েছে কথা হয়েছিল বলে খবর।


এরইমধ্যে তাঁর বিজেপি ও সাংসদ পদ ছাড়ার ঘোষণা নিয়ে দিলীপ ঘোষ ও কুণালের মন্তব্যের সমালোচনা করেছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এদিন তিনি বলেছেন, ‘দিলীপ ও কুণাল ঘোষকে নয়, ওঁদের মন্তব্যগুলোকে অমার্জিত বলেছি।’


ফেসবুক পোস্টে সাংসদ পদ ছাড়ার ঘোষণা। বঙ্গ রাজনীতিতে হইচই ফেলে দিয়েছিল  মধ্যরাতে  বাবুল সুপ্রিয়র পোস্ট। মধ্যরাতে পরপর ফেসবুক পোস্টে দিলীপ ঘোষ ও কুণাল ঘোষকেও আক্রমণ করেন বাবুল। তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।প্রথম পোস্টের প্রায় তেত্রিশ’ঘণ্টা পর, শনিবার সকালে দ্বিতীয় পোস্ট বাবুলের। এরপর, বিকেল চারটে নাগাদ বঙ্গ রাজনীতিতে হইচই ফেলে দেওয়া সেই ফেসবুক পোস্ট। যেখানে বাবুল লেখেন, চললাম।আলবিদা!সমাজসেবা করতে গেলে রাজনীতিতে না থেকেও করা যায়!! নিজেকে একটু গুছিয়ে নিই তারপর...


ফেসবুকে বিস্ফোরণের পর রাতেই বাবুল সুপ্রিয়কে তলব করা হয় বিজেপির সদর দফতরে। সূত্রের খবর, প্রায় আধঘণ্টা তাঁর সঙ্গে কথা বলেন সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। 
এদিকে বাবুলের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে শনিবার দিলীপ ঘোষের গলায় ছিল কটাক্ষের সুর।



ফেসবুক পোস্ট নিয়ে বাবুল সুপ্রিয়কে বেঁধেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও।রাত তিনটেয়, ফেসবুক পোস্টে, দু’জনকেই একসঙ্গে আক্রমণ করেন বাবুল। এক ঘণ্টা পর, আরও একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, কিছু মানুষ নিজেদের রুচি অনুযায়ী ‘ভাষার’ ব্যবহার করেছেন - সবটাই শিরোধার্য।অন্তত দেখুন, এ ধরনের ‘ব্যক্তিত্ব’ বা অমার্জিত মন্তব্যের সাথে তো আর রোজ ডিল করতে হবে না!!...নিচে দুটো টাটকা উদাহরণ দিলাম... প্রথম উক্তিটি ‘সৌজন্য’ শ্রী কুণাল ঘোষ আর দ্বিতীয়টির, শ্রীমান দিলীপ ঘোষ...!


দিলীপ ঘোষ এ ব্যাপারে বলেছিলেন, কারও ব্যক্তিগত মন্তব্য তাঁর। আমাকে আক্রমণ অনেকেই করে, আমার গুরুত্ব বেশি। তাই আক্রমণ করে, খবর থাকতে আক্রমণ। যার গুরুত্ব নেই, আমাকে আক্রমণ করেন, আমার গৌরব।
বাবুলকে কটাক্ষ করেন কুণালও। পাল্টা জবাব দেন বাবুল।   বলেন, দিলীপ-কুণাল নিজেদের মতো বলছেন। এ’ধরনের কথা না হওয়াই ভাল। মাসি-মেসো এসব কথা বলে ভাল করছেন না। কুণাল ঘোষের কথার রিঅ্যাক্ট কেন করব? ছাড়ছি কি ছাড়ছি না, তা পরে দেখা যাবে।


শনিবার বিকেলে, হইচই ফেলে দেওয়া ফেসবুক পোস্টে বাবুল সুপ্রিয় লিখেছিলেন, অন্য কোনও দলে যাচ্ছি না...তৃণমূল-কংগ্রেস-সিপিএম কোথাও নয়।তার কিছুক্ষণের মধ্যেই, এই পোস্টটি এডিট করে, সাংসদ পদ থেকে ইস্তফার কথা জানান বাবুল। কিন্তু, তাৎপর্যপূর্ণভাবে তাতে দলবদল সংক্রান্ত লাইনটি ছিল না।  শনিবার রাত পৌনে বারোটা নাগাদ, ফের একটি ফেসবুক পোস্টে, দলবদল সংক্রান্ত জল্পনা নিয়ে ব্যাখ্যা দেন বাবুল। জানান, ওটা আর কিছু নয়। এডিট করতে গিয়ে ডিলিট হয়ে গিয়েছে। 


জেপি নাড্ডার নির্দেশে কেন্দ্রীয় ও বঙ্গ বিজেপির নেতারা বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করছেন বলে সূত্রের খবর।