নয়াদিল্লি: আজ ২৩ এপ্রিল। প্রবাদপ্রতিম নাট্যকার-সাহিত্যিক উইলিয়াম শেক্সপিয়রের জন্মদিন। একইসঙ্গে আজ তাঁর মৃত্যুদিনও। বিশ্বসাহিত্যের এই কালজয়ী লেখকের মৃত্যু তাঁর জন্মদিনের দিনই। তাঁর লেখনীতে পাঠক শিখেছে রোমিও জুলিয়েটের অমর প্রেমমুগ্ধ হয়েছে ম্যাকবেথকিং লিয়র-এ। আবার হ্যামলেটওথেলো পাঠককে নিয়ে বিষন্নতায়। আজ  ফিরে দেখুন এই কিংবদন্তির জীবন।

ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের অন্তর্গত এভন নদীর তীরে স্ট্রাটফোর্ড শহরে এক দরিদ্র পরিবারে শেক্সপিয়র জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় চার্চের তথ্য থেকে যা জানা যায় তাতে অনুমান তিনি সম্ভবত ১৫৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা জন শেক্সপিয়রের মা ছিলেন আর্ডেন পরিবারের সন্তান। শেক্সপিয়র তার 'অ্যাজ ইউ লাইক ইট'  নাটকে মায়ের নামকে অমর করে রেখেছেন। আঠার বছর বয়সে শেক্সপিয়র বিবাহ করেন তার চেয়ে ৮ বছরের বড় অ্যানি হাতওয়েকে। বিবাহের কয়েক মাসের মধ্যে অ্যানি এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তার নাম রাখা হয় সুসানা। এর দুই বছর পর দুটি যমজ সন্তানের জন্ম হয়। ছেলে হ্যামলেট মাত্র ১ বছর বেঁচে ছিল। পরে তিনি স্ট্রাটফোর্ড ছেড়ে করে লন্ডন শহরে আসেন।

নতুন শহরে এসে নাটকের দলের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। সম্ভবত মঞ্চের প্রয়োজনেরই প্রথম লেখার শুরু তাঁর। রচনার কাল অনুসারে শেক্সপিয়রের নাটকগুলোকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগ ১৫৮৮ থেকে ১৫৯৫ সাল পর্যন্ত। এই পর্বের উল্লেখযোগ্য নাটক 'রিচার্ড থ্রি', 'কমেডি অব এররস', 'টেমিং অব দি শ্রু', 'রোমিও জুলিয়েট'। এরপর দ্বিতীয় ভাগ ১৫৯৬ থেকে ১৬০৮ সাল পর্যন্ত। এই সময়ে রচিত হয়েছে তার শ্রেষ্ঠ চারটি ট্র্যাজেডি- 'হ্যামলেট', 'ওথেলো', 'কিং লিয়ার', 'ম্যাকবেথ'। শেষ পর্বে যে ৫টি নাটক রচনা করেন তার মধ্যে দুটি অসমাপ্ত, তিনটি সমাপ্ত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'দি টেম্পেস্ট'। শেক্সপিয়রের এই নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে কমেডি, ঐতিহাসিক নাটক, ট্র্যাজেডি, রোমাঞ্চ। কমেডি-শেক্সপিয়রের উল্লেখযোগ্য 'কমেডি হলো লাভস লেবারস লস্ট', 'দি টু জেন্টলম্যান অব ভেরোনা', 'দি টেমিং অব দি শ্রু'।  'এ মিড সামার নাইটস ড্রিম', 'মার্চেন্ট অব ভেনিস', 'ম্যাচ অ্যাডো অ্যাবাহুট নাথিংস', 'টুয়েলফথ নাইট', 'অ্যাজ ইউ লাইক ইট'। এর মধ্যে মাত্র কয়েকটিকে বাদ দিলে সমস্ত নাটক এক অসাধারণ সৌন্দর্যে উজ্জ্বল। প্রতিটি চরিত্রই জীবন্ত প্রাণবন্ত সজীবতায় ভরপুর। শেক্সপিয়রের বিখ্যাত কমেডিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কমেডি হলো 'দি মার্চেন্ট অব ভেনিস'।

ঐতিহাসিক নাটক-ইতিহাসের প্রতি শেক্সপিয়রের ছিল গভীর আগ্রহ। একদিকে ইংল্যান্ডের ইতিহাস অন্যদিকে গ্রিক ও রোমান ইতিহাসের ঘটনা থেকেই তিনি তার ঐতিহাসিক নাটকগুলোকে অসাধারণ পর্যায়ে উন্নীত করেছেন। ঐতিহাসিক নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'রিচার্ড থ্রি', 'হেনরি ফোর', 'জুলিয়াস সিজার', 'অ্যান্টনি ও ক্লিওপেট্রা'।

শেক্সপিয়রের শেষ পর্যায়ের লেখাগুলো ট্র্যাজেডি বা কমেডি থেকে ভিন্নধর্মী। রোমাঞ্চ, নাটকীয়তা, বিচিত্র কল্পনার এক সংমিশ্রণ ঘটেছে এসব নাটকে। সিমবেলিন, উইন্টার্সটেল, টেমপেস্ট তাঁর শেষ পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য নাটক। নাটক ছাড়াও কিছু কবিতা লিখেছিলেন তিনি।

১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল ইংল্যান্ডের স্ট্র্যাটফোর্ড-আপঅন-অ্যাভন, ওয়ারউইকশায়ার-এ মারা যান এই কালজয়ী নাট্যকার।