নয়াদিল্লি: বকেয়া বিদ্যুতের বিল না মেটানোর অভিযোগ। সেই নিয়ে টানাপোড়েন চলছিলই। এবার বাংলাদেশের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দিল আদানি গোষ্ঠী। ঝাড়খণ্ডে আদানিদের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। শেখ হাসিনার সময়ে ওই চুক্তি হয়েছিল, যা নিয়ে অধুনা মহম্মদ ইউনূস সরকারের সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে। আদানিদের দাবি, বিদ্যুতের বিল বাবদ প্রায় ৮৪ কোটি ডলার বাকি রেখেছে বাংলাদেশ সরকার। তাতেই এবার বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দিল আদানিরা। (Adani Power Supply to Bangladesh)


Power grid Bangladesh PLC এ নিয়ে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে আদানিরা। ওই রাতে বিদ্যুতে ১৬০০ মেগাওয়াটের বেশি ঘাটতি ছিল বলে জানা গিয়েছে। তাদের দাবি অনুযায়ী, ঝাড়খণ্ডে আদানিদের ১৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে এই মুহূর্তে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎই উৎপন্ন করা হচ্ছে, যা অর্ধেকেরও কম।। (Bangladesh Electricity Shortfall)


এর আগে, Bangladesh Power Development Board-এর সচিবকে চিঠি দেয় আদানিরা। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বকেয়া বিল মেটাতে বলা হয় সেই চিঠিতে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া না মেটানো হলে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির আওতায় পদক্ষেপ করা হবে, বিদ্যুৎ সরবরাহে রাশ টানা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। আদানিদের দাবি, না বকেয়া টাকা মিটিয়েছে বাংলাদেশ সরকার, না লেটার অফ ক্রেডিট (ঋণপত্র) দিয়েছে। 


যদিও বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের তরফে অন্য দাবি করা হয়েছে। তাদের দাবি, আগের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল আদানিদের। কিন্তু জুলাই মাস থেকে কয়লার বাড়চি দাম ধরে, আদানিরা বেশি টাকা চাইতে শুরু করেছে। নয়া দর অনুযায়ীই বকেয়া টাকা এত পরিমাণে গিয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি তাদের। শুধু তাই নয়, গত সপ্তাহের টাকা কৃষি ব্যাঙ্কে জমা করা হলেও, ডলারের ঘাটতির জন্য লেটার অফ ক্রেডিটও (ঋণপত্র) দেওয়া যায়নি বলে দাবি ঢাকার।


বাংলাদেশের বর্তমান সরকার হাসিনা আমলে স্বাক্ষরিত এই বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন তুলে আসছে। এমনকি হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যে গণ আন্দোলনের সূচনা ঘটে, তাতেও এই বিদ্যুৎ চুক্তির প্রসঙ্গ ছিল। পায়রা এবং রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে আদানিরা বেশি দাম নিচ্ছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের। তাদের দাবি, আদানিরা যেখানে ৯৬ ডলার করে দাম ধরছে, সেখানে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র দর ধরছে ৭৫ ডলার। বকেয়া মেটাতে দেরি হলে আদানিরা ১৫ শতাংশ হারে সুদ নিলেও, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র সুদ নিচ্ছে না। ফলে একতরফে ভাবে আদানিরা এই চুক্তির বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের। 


হাসিনা বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০১৭ সালে আদানিদের সঙ্গে বিদ্যুৎচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ঢাকার। ঠিক হয়, ঝাড়খম্ডে আদানিদের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১০০ শতাংশ বিদ্যুৎই কিনবে তারা। কিন্তু আদানিরা যে টাকায় বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে, তা অন্য সংস্থার থেকে অনেকটাই চড়া বলে অভিযোগ। ভারতের অন্যান্য সংস্থা থেকে বাংলাদেশ ইউনিট প্রতি গড়ে ৮ টাকা ৭৭ পয়সা (বাংলাদেশি মুদ্রায়) দরে বিদ্যুৎ কিনলেও, আদানিদের কাছ থেকে ১৪ টাকা ২ পয়সা দরে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছিল। নরেন্দ্র মোদিকে খুশি করতেই আদানিদের থেকে চড়া দামে হাসিনা বিদ্যুৎ কিনতে রাজি হন বলেও রয়েছে অভিযোগ।


বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে ভারতেও। ঝাড়খণ্ডের গোন্ডায় আদানিদের ওই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চলে অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা কয়লার উপর নির্ভর করে। বিদেশ থেকে আনা কয়লায় শুল্কছাড় থেকে, যন্ত্রপাতির উপর GST ছাড়, আদানিদের বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ মোদি সরকারের বিরুদ্ধেষ এমনকি পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে যে কর দিতে হয় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে, আদানিদের ক্ষেত্রে তা মাফ করে দেওয়া হয় বলেও জানা যায়। ঝাড়খণ্ডে ওই কয়লা খনি নির্মাণের জন্য যেভাবে জমি নেওয়া হয়, তা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। বিদেশে রফতানি করতে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ হলেও, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি দেখে রীতিমতো আইন সংশোধন করে আদানিদের ওই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দরজা ভারতীয় বাজারে খুলে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ বিরোধীদের।