নয়াদিল্লি: পর পর তিনটি শক্তিশালী কম্পনে আবারও তছনছ আফগানিস্তানে। নয় নয় করে মৃত্যুসংখ্যা বেড়ে হল ২০০০ (Afghanistan Death Toll)। রবিবার তালিবানের তরফে বিবৃতি দিয়ে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। ছ'-ছ'টি গ্রাম ধুলোয় মিশে গিয়েছে। তার নীচে এখনও বহু মানুষ চাপা পড়ে রয়েছেন। গত দুই দশকে এত প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানা যাচ্ছে। (Afghanistan Earthquake)
শনিবার দুপুরে পর পর তিন বার ভূমিকম্প হয় আফগানিস্তানে। ১২টা বেজে ৪২ মিনিটে সবচেয়ে তীব্র কম্পন অনুভূত হয়। সেবার কম্পনের তীব্রতা ছিল ৬.২। তার আগে, ১২টা বেজে ১৯ মিনিটে যে কম্পন অনুভূত হয়, তার তীব্রতা ছিল ৫.৬। আর প্রথম বার ১২টা বেজে ১১ মিনিটে যে কম্পন অনুভূত হয়, রিখটার স্কেলে তার তীব্রতা ছিল ৬.১। এর পর, পর পর আটটি আফটার শকও অনুভূত হয়।
এবারে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল হেরাট শহরের ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। এই হেরাট শহরটি ইরান সীমান্ত থেকে ১২০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত হেরাট। ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাঙ্ক জানায়, ১৯ লক্ষ মানুষের বসবাস সেখানে। ভূমিকম্পপ্রবণ ওই এলাকা আদৌ বসবাসের উপযোগী বলে আগেই জানিয়েছিল বিশ্বব্যাঙ্ক। হেরাট ছাড়াও, ফারাহ্, বদগিতেও ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, হেরাট প্রদেশের কমপক্ষে ১২টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরছাড়া প্রায় ৪,৫০০ মানুষ। ধুলোয় মিশে গিয়েছে ছয়টি গ্রাম। এখনও পর্যন্ত ৬০০টি বাড়ি ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। তার নীচে এখনও বহু মানুষ চাপা পড়ে রয়েছে বলে আশঙ্কা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ২০০টি গ্রাম। হতাহতের সংখ্য়া আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আফগানিস্তানের তথ্য এবং সংস্কৃতি বিভাগের মন্ত্রী আব্দুল ওয়াহিদ রায়ান জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত হতাহতের যে পরিসংখ্যান উঠে আসছে, তা আরও বাড়তে পারে। দেশের বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের মুখপাত্র মহম্মদ আবদুল্লা জান জানিয়েছেন, জেন্দা জান জেলায় আফটার শকের প্রভাব পড়ে। সেখানকার চারটি গ্রাম কার্যতই ধুলোয় মিশে গিয়েছে।
ভূমিকম্পে সবকিছুপ তছনছ হয়ে গিয়েছে হেরাট প্রদেশে। টেলিফোন সংযোগও কাজ করছে না বলে জানা গিয়েছে। ফলে ঘটনাস্থল থেকে তথ্য পেতে সময় লাগছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ছবি এবং ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে কয়েকশো মানুষকে ধ্বংসস্তূপের সামনে, রাস্তায় বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। ওই ছবি এবং ভিডিও-র সত্যতা যদিও যাচাই করে দেখেনি এবিপি আনন্দ। ইতিমধ্যেই উদ্ধারকার্য শুরু হয়েছে সেখানে। হাসপাতালগুলিকে আগেই তৎপর হতে বলা হয়েছিল। বহু মানুষ আহত অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন সেখানে। ত্রাণসামগ্রীও পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ, WHO-র তরফেও সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এমনিতে ভূমিকম্প প্রবণ দেশ হিসেবেই পরিচিত আফগানিস্তান। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পার্বত্য অঞ্চল এলাকায় প্রায়শই ভূমিকম্প হয়। ইউরেশিয়ান এবং টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত বলেই এমনটা ঘটে।