নয়াদিল্লি: লোকসভায় রামমন্দির নিয়ে আলোচনায় বিজেপি-র সঙ্গে নিজের ফারাক বোঝালেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন দলের নেতা তথা সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। আসাদউদ্দিন জানান, ভগবান রামকে শ্রদ্ধে করেন তিনি। কিন্তু বিজেপি-র যে 'রাম', নাথুরাম, তাঁকে ঘৃণা করেন। নরেন্দ্র মোদি দেশের একটি মাত্র সম্প্রদায়ের প্রধানমন্ত্রী কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন ওয়েইসি। (Asaduddin Owaisi)
শনিবার লোকসভায় আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল রামমন্দির। সেই নিয়ে বলতে ওঠেন ওয়েইসিও। তিনি বলেন, "আমি কি বাবরের মুখপাত্র, আমি কি জিন্নাহ্-র মুখপাত্র, নাকি ঔরঙ্গজেবের মুখপাত্র? বলুন আর কোথায় নিয়ে যাবেন আমাকে। মর্যাদা পুরুষোত্তম রামকে শ্রদ্ধা করি আমি। কিন্তু নাথুরাম গডসেকে ঘৃণা করি। কারণ নাথুরাম গডসে সেই ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে গুলি চালান, যাঁর শেষ বাক্য ছিল 'হে রাম'।" (Lok Sabha Elections 2024)
লোকসভায় ওয়েইসি বলেন, "১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজও বাবরের কথা বলা হচ্ছে, জালিয়ানওয়ালা বা কালাপানির কথা নয়। মোদি সরকার ভারতের মুসলিমদের একটাই বার্তা দিচ্ছে, প্রাণে বাঁচতে চাও না সুবিচার? হিন্দু-মুসলিম মিলে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। আজ এই দেশের কাকে প্রয়োজন? এমন ব্যক্তিদের প্রয়োজন, বাবা মোদিকে প্রয়োজন নেই দেশের। দেশের প্রধানমন্ত্রী ১৪০ কোটি মানুষের কাছে দায়বদ্ধ, নাকি শুধু হিন্দুদের কাছে? বাবরি মসজিদ ছিল, আছে, থাকবে। ভারত ছিল, আছে, থাকবে।"
সরাসরি মোদির উদ্দেশেও প্রশ্ন ছুড়ে দেন ওয়েইসি। তিনি বলেন, "আমি আজ জানতে চাই, প্রধানমন্ত্রী মোদির সরকার শুধু কি একটি মাত্র সরকারের? গোটা দেশে একটি মাত্র ধর্মই কি পালিত হয়? এই সরকারের কি নিজের ধর্ম রয়েছে? আমার বিশ্বাস, একটি মাত্র ধর্মের জন্য এই দেশের পরিচিতি নয় এবং কখনও তা হওয়া উচিত নয়।"
এক ধর্মের বিরুদ্ধে অন্য ধর্মের জয় প্রতিষ্ঠার করতেই গত ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় মহাসমারোহে রামমন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয় বলেও দাবি করেন ওয়েইসি। তিনি বলেন, "২২ জানুয়ারির অযোধ্যা নিয়ে আজকের এই প্রস্তাবেই বোঝা যাচ্ছে, সরকার দেশকে বার্তা দিচ্ছে। তাহলে কি এক ধর্মের উপর অন্য ধর্মের বিজয় ঘোষণা করছে সরকার? দেশের ১৭ কোটি মুসলিমকে কি বার্তা দিচ্ছে সরকার?" এ নিয়ে বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে বাগযুদ্ধেও জড়ান ওয়েইসি। তিনি জানান, নিশিকান্ত দুবের মতো বিজেপি সাংসদরা আজও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের বাবর, জিন্নাহ্কে নিয়ে বিব্রত করার চেষ্টা করেন। দেশের সংবিধান যেখানে সকল নাগরিককে সমান অধিকার দিয়েছে, শাসকদলের তরফে এই ধরনের বার্তা দেশের জন্য মোটেই সুখকর নয়।