অরিন্দম সেন, আলিপুরদুয়ার : সরকারি-বেসরকারি বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু, নগদ টাকা ছাড়া বারংবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন বলে অভিযোগ। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথির কার্ড থাকতেও দুই বছরের বেশি সময় ধরে হাতের টিউমারের যন্ত্রণায় কাতর ব্যক্তি হয় চিকিৎসা, না হলে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়েছেন বিডিও-র কাছে।
আলিপুরদুয়ার ২ নম্বর ব্লকের উত্তর মজিদ খানা গ্রামের বাসিন্দা বছর ৫৭-এর সুমু রঞ্জন কর। পেশায় ছোট ব্যবসায়ী। দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে তাঁর ডান হাতের একটি টিউমারের যন্ত্রণায় ভুগছেন।
প্রথমদিকে জেলা হাসপাতাল, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল হাসপাতাল হয়ে প্রাইভেট হাসপাতাল, নার্সিংহোম বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করেছেন চিকিৎসা করানোর। কিন্তু অভিযোগ, অপারেশন করে সুস্থ করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরবর্তীকালে তাঁরা পিছিয়ে পড়ছেন বিভিন্ন অছিলায়।
রোগীর পরিবারের অভিযোগ, নগদ টাকার পরিবর্তে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের উল্লেখ করাতেই এমন হচ্ছে। ফলে, বিভিন্ন জায়গায় প্রত্যাখ্যাত হয়ে আজ হাতের প্রবল যন্ত্রণায় মাটির বাড়ির বারান্দায় শুয়েই কাতরাচ্ছেন অসহায় ব্যক্তি। একদিকে রোজগারহীনতা, অপরদিকে কলেজে পড়া একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে দিশেহারা সুমুরঞ্জন রাতে ঘুমোতেই পারেন না। এই অবস্থায় নিরুপায় সুমুরঞ্জন এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসার ব্যবস্থা নতুবা স্বেচ্ছামৃত্যুর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন ব্লক আধিকারিকের কাছে।
আলিপুরদুয়ারের বিডিও চিরঞ্জিৎ সরকার জানান, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি স্বাস্থ্য দফতরের নজরেও আনছি। পরিবারের সাথে দেখা করে কি ব্যবস্থা নিলে তাঁদের উপকার হবে সেটাও দেখছি।
আলিপুরদুয়ার জেলা মুখ্য স্বাস্থ আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা তাঁর বিভিন্ন চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন দেখেছি। ওঁর বোন টিউমার রয়েছে। টিউমার কেটে বাদ দিয়ে দেব, বিষয়টা তেমন সহজ নয়। অর্থোপেডিক সেলের বিশেষ ব্যবস্থা না থাকলে অপারেশন করা ঝুঁকির। আগামী বৃহস্পতিবার জেলা হাসপাতালে বিশেষ মেডিক্যাল টিম গঠন করে রোগীকে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে বলে জানান জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা।
এদিকে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদনের কথা জানতে পেরে করোনাকালে রোজগারহীন এই পরিবারের হাতে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিলেন আলিপুরদুয়ার-২ নং ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অনুপ দাস। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এমন হতে দেওয়া যাবে না। স্বাস্থ্য দফতর চিকিৎসার বিষয়টি দেখলেও যতদিন তিনি সুস্থ না হন, তাঁর খাদ্য সামগ্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করছেন বলে দাবি করেন তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অনুপ দাস।