সমিত সেনগুপ্ত, লালগড়: সেই লালগড়। যেখানকার বাসিন্দাদের উপর বন্যপ্রাণ হত্যার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তারাই এবার ত্রাতার ভূমিকায়। বনকর্মীদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে প্রাণ বাঁচালেন একটি হস্তি শাবকের।


প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে গ্রাম সংলগ্ন চাষের ক্ষেতে একাধিক হাতি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, গ্রামবাসীরা খবর দেয় বনদপ্তরে। সেইসঙ্গে হাতির দল কে জঙ্গলে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য শুরু করেন তৎপরতা। একটু এগোতেই গ্রামবাসীদের চোখে পড়ে, একটি পরিত্যক্ত কুয়ো থেকে কিছু বিকট শব্দ ভেসে আসছে। আওয়াজ শুনতে পেয়ে গ্রামবাসীরা সাহস করে এগিয়ে যান সেখানে। সামনে গিয়ে দেখেন একটি হস্তি শাবক প্রায় ২০ ফুট নিচে পরিত্যক্ত কুয়োয় পরে ছটফট করছে। কাছেই দাঁড়িয়ে হস্তি শাবক এর মা, সন্তানকে উদ্ধার করার জন্য তারস্বরে চিত্কার করছে। গ্রামবাসীদের তৎপরতায়, হস্তি শাবকটিকে উদ্ধারের কাজ শুরু হয়।



হুলা পার্টির সাহায্য নিয়ে হাতির দলটিকে কিছুদূর তাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে, মানুষ যাওয়ার জন্য সুরক্ষিত করা হয় এলাকাটিকে। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান বনদপ্তর এর কর্মীরা। কিন্তু কোন অবস্থাতেই হস্তিশাবক টিকে ওই পরিতক্ত কুয়ো থেকে বাইরে বের করে আনা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে মাটি খোঁড়ার যন্ত্র এনে ঘন্টাখানেকের চেষ্টায় গভীরতা কমানো হয় কুয়োটির। তারপর বনদপ্তর এর কর্মীরা নিচে নেমে হাতিটিকে দড়ি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে।

হস্তিশাবকটি উপরে উঠতেই বনদপ্তর এর কর্মীরা দেখে নেন শরীরে কোথাও আঘাত আছে কিনা। শাবকটির শারীরিক কোনো অসুবিধে নেই সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরেই কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা মা হাতির কাছে ছেড়ে দেওয়া হয় শাবকটিকে। পশু প্রেমীরা বলছেন ২৬  জানুয়ারি সকালে সুষ্ঠু অবস্থায় হস্তি শাবক এর মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার ঘটনা অনেকের কাছেই উদাহরণ সৃষ্টি করল। এই ঘটনা প্রমাণ করলো বন্যপ্রাণ সম্পর্কে জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। কিছুদিন আগেই দক্ষিণ ভারতে একটি দলছুট হাতি রিসোর্টে ঢুকে পড়ায় তাকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ ওঠে ওই রিসর্টের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে। শস্য ক্ষেতে হাতি চলে আসা আটকাতে আনারসের মধ্যে বোমা রেখে অমানবিক ঘটনার নজির রয়েছে কেরালায়। কিন্তু মঙ্গলবার এর ঘটনা, বন্য প্রাণীর প্রতি এইসব হিংস্র আচরণের বিরুদ্ধে উৎসাহজনক নজির গড়ল বলে মনে করছেন বনদপ্তর আধিকারিকরা।