নয়াদিল্লি: লোকসভায় দাঁড়িয়ে রাহুল গাঁধীকে বেনজির আক্রমণ। জাতিগণনার দাবি তুলছেন যাঁরা, তাঁদের জাতের ঠিক নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর। তাঁর সেই মন্তব্য নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী অনুরাগ, লোকসভায় দাঁড়িয়ে এমন মন্তব্য করেন কী করে, তার পরও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না কেন, প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। (Anurag Thakur)


দেশে জাতিগণনার দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই সরব বিরোধীরা, যার একেবারে অগ্রভাগে রয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল। মঙ্গলবার সেই নিয়ে লোকসভায় বেলাগাম মন্তব্য করেন অনুরাগ। বলেন, "কংগ্রেসের শাহজাদা আমাদের জ্ঞান দেবেন? বার বার ওবিসি-দের কথা বলা হয়, বার বার করে জাতিগণনার কথা বলা হয়। যাঁদের নিজেদের জাতের ঠিক নেই, তাঁরাই জাতি-গণনার দাবি করছেন।" (Rahul Gandhi)


অনুরাগের এই মন্তব্যে হুলস্থুল পড়ে যায় লোকসভায়। আক্রমণের জবাবে রাহুল বলেন, "এই দেশে দলিত, আদিবাসী, অনগ্রসর শ্রেণির কথা বলতে গেলে, তাঁদের হয়ে লড়াই করতে গেলে গালি খেতেই হয়। হাসিমুখি আমি সব গালি সহ্য করে নেব। জাতি জনগণনা করে দেখাব। আপনারা যত খুশি গালি দিন আমাকে, হাসিমুখে সহ্য করে নেব।"


কিন্তু রাহুল হাসিমুখে আক্রমণ সহ্য করার কথা বললেও, বিরোধীরা প্রায় সকলেই অনুরাগের মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। সংসদে এদিন বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেন, "একবার আমি মন্দিরে গিয়েছিলাম। আমাকে সেখানে পুজো-যজ্ঞ করতে দেওয়া বয়নি। আমি বেরিয়ে যাওয়ার পর ধোয়া হয়েছিল মন্দির, যা ভুলতে পারিনি আজও। আমি বেরিয়ে যাওয়ার পর গঙ্গাজল দিয় ধোয়া হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনও। যখন চাঁদের মাটি ছোঁয়ার চেষ্টা করছি আমরা, দেশের ডিজিটালকরণ নিয়ে কথা বলছি, সেই সময় সংসদে দাঁড়িয়ে কি কারও জাত নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়?"


কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ বলেন, "জাতিগণনা নিয়ে সংসদে বিজেপি নেতা যে নিষ্ঠুর এবং অসংবেদনশীল মন্তব্য করেছেন, তার বিরোধিতা করেছি আমরা। আমরা জানি জাতিগণনা একটি আবেগঘন বিষয়। ভারতের তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মানুষের দাবিকে বিজেপি বিদ্রুপ করেছে। সংসদ থেকে তাঁদের অপমান করা হয়েছে।"



লোকসভায় অনুরাগের ভাষণের যদিও প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর মতে, অনুরাগের কথা সকলের শোনা উচিত। বিরোধী শিবিরের নোংরা রাজনীতির পর্দাফাঁস করেছেন তিনি। সেই নিয়ে মোদিরও সমালোচনা করেন গৌরব। তাঁর কথায়, "দলিত, আদিবাসী, OBC-দের অপমান করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে প্রধানমন্ত্রী ওই মন্তব্যের প্রশংসা করেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুরাগের ভাষণ সকলের সঙ্গে শেয়ারও করেন।"


ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সাংসদ মহুয়া মাজিও অনুরাগের সমালোচনা করেন। তাঁর কথায়, "জাতি জনগণনা প্রয়োজন। ভারত বৈচিত্রপূর্ণ দেশ। সেই কারণেই আরও বেশি করে জাতিগণনা প্রয়োজন। ঝাড়খণ্ডের সংস্কৃতিই জল, জঙ্গল এবং জমি। উন্নয়নের দোহাই দিয়ে সেখানে কংক্রিটের শপিং মল গড়া হচ্ছে। সেখানকার মানুষ মোটেই খুশি নন। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিজস্ব দাবিদাওয়া আছে।"


DMK সাংসদ কানিমোঝি বলেন, "দুর্ভাগ্যের বিষয় যে একজন সিনিয়র নেতা, যিনি একসময় মন্ত্রীও ছিলেন, তাঁর কাছে মানুষের চেয়ে জাত এত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের যুবসমাজকে কোন পথে নিয়ে যেতে চান ওঁরা, এ থেকেই বোঝা যায়। আমি দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সত্যিই উদ্বিগ্ন। আরও দুঃখজনক বিষয় হল, প্রধানমন্ত্রী ওই ভাষণটি পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, যাতে সকলে শুনতে পারেন।"


রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সাংসদ মনোজ ঝা বলেন, "আমি একটাই কথা বলব, অনুরাগ ঠাকুর মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নিজের সঙ্কীর্ণ এবং সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন উনি। রাহুল গাঁধী, অখিলেশ যাদব, মনোজ ঝা, তেজস্বী যাদবের জাতের প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন জাতিগণনা নিয়ে অবস্থানের। নিজের সামন্ততান্ত্রিক চরিত্র প্রকাশ করেছেন উনি।"


অনুরাগকে পাল্টা জবাব দেন কংগ্রেসের সুপ্রিয়া শ্রীনেত। তাঁর কথায়, 'রাহুল গাঁধীর জাত জানতে চান? কার প্রপিতামহ স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সাড়ে ন'বছর জেল খাটেন? কার ঠাকুরদা দেশে জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেন? কার ঠাকুমা এবং বাবা এই দেশের জন্য শহিদ হন? কার মা প্রতিদিন লাঞ্ছনা সহ্য করে এই দেশের জন্য নিজেকে সমর্পণ করেছেন?  আর রাহুল গাঁধী! ওঁর সামনে দাঁড়ানোর যোগ্যতা নেই আপনার'।


আরও পড়ুন: Ashwini Vaishnaw: পর পর দুর্ঘটনা নিয়ে খরচ করলেন না একটি শব্দও, লোকসভায় বন্দেভারত-বুলেট ট্রেন ও মোদি বন্দনা রেলমন্ত্রীর