নয়াদিল্লি: জামিন পেয়ে জেল থেকে বেরিয়েছেন দু'দিন আগেই। আর তার পরই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ঘোষণা করলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। মানুষের রায়ে জয়ী হয়ে তবেই ফের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসবেন বলে ঘোষণা করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরও বার্তা দিয়েছেন কেজরিওয়াল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এম কে স্ট্যালিন, সিদ্দারামাইয়া, হেমন্ত সোরেনদের অনুরোধ করেছেন, কোনও পরিস্থিতিতেই যাতে কেউ পদত্যাগ না করেন, জেল থেকেই সরকার চালান। (Arvind Kejriwal)
আবগারি দুর্নীতি মামলায় শুক্রবারই জেল থেকে জামিন পেয়ে বেরোন কেজরিওয়াল। রবিবার দিল্লিতে আম আদমি পার্টির কর্মী-সদস্যদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন। সেখান থেকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন তিনি। অবিজেপি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বিজেপি হেনস্থা করছে, ED-CBI লাগিয়ে ভুয়ো মামলা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন। (Mamata Banerjee)
এদিন কেজরিওয়াল বলেন, "বিধায়ক ভাঙানো, ED, CBI দিয়ে ভয় দেখানো, ভুয়ো মামলা করে জেলে ভরে দেওয়া, সরকার ফেলে দেওয়াই বিজেপি-র ফর্মুলা। ভেবেছিল, কেজরিওয়ালকে জেলে ভরলে আম আদমি পার্টি ভেঙে যাবে। বিধায়ক ভাঙিয়ে দিল্লিতে সরকার গড়ে ফেলবে বিজেপি। পঞ্জাবেও বিধায়ক ভাঙিয়ে সরকার গঠন করা সম্ভব হবে। কিন্তু আমাদের দল ভাঙেনি, বিধায়ক-কার্যকর্তাদের ভাঙাতে পারেনি। এদের এতবড় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতা আছে আমাদের। ভেবেছিল মনোবল ভেঙে দেবে। জেলে এই ১৫০-২০০ দিনে আমার মনোবল ১০০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।"
প্রায় ছ'মাস ধরে জেলবন্দি ছিলেন কেজরিওয়াল। সেই সময় লাগাতার তাঁর ইস্তফার দাবিতে সরব হয় বিজেপি। কেন ইস্তফা দেননি, এদিন তার জবাবও দেন কেজরিওয়াল। বলেন, "ইস্তফা দিইনি কারণ দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম। এটা বিজেপি-র নয়া ফর্মুলা। যেখানে যেখানে হেরেছে, সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ভুয়ো মামলা করে, গ্রেফতার করে, ED-CBI পাঠিয়ে সরকার ফেলার দেওয়ার চেষ্টা। হেমন্ত সোরেন, সিদ্দারামাইয়া, পিনারাই বিজয়নের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধেও একই জিনিস চলছে। বিরোধী শিবিরের একজন মুখ্যমন্ত্রীকেও ছাড়ে না এরা। ভুয়ো মামলা করে, জেলে ঢোকায়। ১০ দিন আগে সুপ্রিম কোর্টের এক বেঞ্চ কেন্দ্রের কাছে জানতে চায়, জেলের ভিতর থেকে সরকার চলতে পারবে না কেন? অর্থাৎ জেলের ভিতর থেকে সরকার চলতে পারে। তাই দেশের সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের হতজোড় করে বলব, প্রধানমন্ত্রী যদি জেলে ঢোকানোর হিম্মত দেখান, ইস্তফা দেবেন না। জেল থেকে সরকার চালান।"
জেল থেকে সরকার চালানোর আবেদন নিয়ে কেজরিওয়াল বলেন, "আমরা লোভী নই। চেয়ার আঁকড়ে পড়ে থাকার বাসনা নেই। কিন্তু সবিধান, দেশ, গণতন্ত্রকে বাঁচাননো জরুরি। যে সরকার সংখ্য়ারগরিষ্ঠতা পেয়ে নির্বাচনে জয়ী হচ্ছে, সেই সরকাকে জেলে ভরছে, ইস্তফা চাইছে। সকল মুখ্যমন্ত্রীদের অনুরোধ, ওদের এই নতুন ফর্মুলা ব্যর্থ করে দিন।"
গত কয়েক বছরে বার বার কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতি করার অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। বাংলার মুখ্য়মন্ত্রী মমতাও সেই নিয়ে সরব হয়েছেন। বিধানসভা, লোকসভা নির্বাচনে দাঁত ফোটাতে না পেরে, বিজেপি গায়ের জোরে রাজ্যে সরকার গড়তে চাইছে এবং তার জন্য তাঁকে ও তাঁর দলকে বদনাম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। সেই প্রেক্ষিতে মমতাকেও আজ বার্তা দেন কেজরিওয়াল।
আরও পড়ুন: Arvind Kejriwal: দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন কেজরিওয়াল, হঠাৎ ঘোষণায় শোরগোল