নয়াদিল্লি: আদালতে শুনানি চলাকালীন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal)। আবগারি দুর্নীতি মামলা তাঁকে হেফাজতে নেওয়া নিয়ে শুনানি চলছিল দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে। সেখানেই ED-কে তীব্র আক্রমণ করলেন কেজরিওয়াল। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর দল আম আদমি পার্টিকে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। (Delhi Liquor Policy Case)
এক সপ্তাহের জন্য কেজরিওয়ালকে হেফাজতে নিয়েছিল ED. বৃহস্পতিবার আরও চার দিনের জন্য কেজরিওয়ালকে হেফাজতে পেয়েছে তারা। সেই নিয়েই আদালতে শুনানি চলাকালীন ED-কে আক্রমণ করেন কেজরিওয়াল। মাত্র কয়েক মিনিটের জন্যই কথা বলার সুযোগ পান তিনি। আদালতে দাঁড়িয়ে বলেন, "আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু কোনও আদালত আমাকে দোষী সাব্যস্ত করেনি। CBI ৩১ হাজার পাতার চার্জশিট জমা দিয়েছে, ED চার্জশিট জমা দিয়েছে ২৫ হাজার পাতার। দুই সংস্থার চার্জশিটের গোটাটা পড়ে দেখতে পারেন, তাতেও প্রশ্ন উঠবে যে আমাকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে?"
কেজরিওয়ালকে আরও সাত দিনের হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানিয়েছে ED. তাঁকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু কেজরিওয়ালের দাবি, তাঁর দলকে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ED. আবগারি দুর্নীতিতে যে ১০০ কোটি টাকা ঘুষের কথা বলা হচ্ছে, তার মধ্যে একটি টাকাও তুলে এনে দেখাতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা।
আরও পড়ুন: Arvind Kejriwal Arrest:মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে কেজরির অপসারণ চেয়ে মামলা খারিজ দিল্লি হাইকোর্টের
এদিন আদালতে কেজরিওয়াল জানান, হাজার হাজার পাতার চার্জশিট জমা পড়েছে, তাতে মাত্র চার বার অরবিন্দ নামের উল্লেখ রয়েছে। যে চার বার অরবিন্দ নামটির উল্লেখ করা হয়েছে চার বার, তার মধ্যে একজন অন্য ব্যক্তি, সি আরবিন্দ, দিল্লির প্রাক্তন উপ মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়ার সচিব। কিছু নথি হাতবদলের কথা জানিয়েছিলেন সি অরবিন্দ।
সেই প্রসঙ্গে আদালতে কেজরিওয়াল বলেন, "চার বার আমার নামের উল্লেখ রয়েছে চার্জশিটে, যার মধ্য়ে একজন আবার অন্য ব্যক্তি, সি অরবিন্দ। ওঁর উপস্থিতিতে সিসৌদিয়াজি আমাকে কিছু নথি দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন উনি। আমার বাড়িতে রোজই বিধায়করা আসেন, হাতে ফাইল তুলে দেন। সরকারি কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা হয়। এই বয়ানের ভিত্তিতে কি ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা যায়?"
সরকারি সাক্ষী হিসেবে যে বয়ান তুলে ধরেছে ED, সেই নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলেন কেজরিওয়াল। জেোর করে ওই বয়ান আদায় করা হয়েছে বলে দাবি করেন। তাঁর বক্তব্য, "ED-র একটাই লক্ষ্য, আমাকে ফাঁদে ফেলা। এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিন বয়ান রেকর্ড করা হয়েছিল। যে বয়ানে আমার নাম ছিল, শুধু সেই বয়ানই আদালতে জমা পড়েছে। কেন? এ তো অন্যায়।"
কেজরিওয়াল আরও জানান, Aurobindo Pharma সংস্থার ডিরেক্টর শরৎ রেড্ডি নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বিজেপি-কে ৫০ কোটির বেশি চাঁদা দিয়েছেন। এই গোটা বিষয়টি একটি চক্র, তাঁর কাছে এর প্রমাণও রয়েছে বলে জানান কেজরিওয়াল। তাঁর কথায়, "ED-র রিম্যান্ড পিটিশনের বিরোধিতা করছি না আমি। যত দিন চায় আমাকে হেফাজতে রাখতে পারে। কিন্তু এটা একটা দুর্নীতি। ED-কে স্মোকস্ক্রিন তৈরি করতে বলা হয়েছে, যাতে তোলাবাজি করে টাকা সংগ্রহ করতে পারে বিজেপি।"
এদিন আদালতে ED-র হয়ে সওয়াল করেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু। কেজরিওয়ালা বিভ্রান্তি তৈরি করছেন বলে দাবি করেন তিনি। ED-র কাছে কতগুলি নথি রয়েছে, তা কেজরিওয়াল কী করে জানলেন, প্রশ্ন তোলেন। কেজরিওয়াল আদালতে মনগড়া গল্প শোনাচ্ছেন বলে দাবি করেন। তাঁর বক্তব্য, "AAP যে সুবিধা পেয়েছিল, তা গোয়ার নির্বাচনে ব্যবহার করা হয়। একটি শৃঙ্খল রয়েছে। হাওয়ালার টাকা যে এসেছিল, তার সপক্ষে বয়ান এবং নথি রয়েছে আমাদের কাছে। উনি (কেজরিওয়াল) যে ১০০ কোটি টাকা চেয়েছিলেন, তার প্রমাণ রয়েছে।"