নয়াদিল্লি: সবেমাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছে সেই সময়। লক্ষ লক্ষ মানুষ তখনও আশ্রয়হীন। ফলে দীপাবলির উৎসব জুড়েও আঁধার বজায় ছিল দেশে। বিশেষ করে দেশভাগের ক্ষত বহন করা উত্তর এবং পূর্ব ভারতে দীপাবলির উৎসবে আলো জ্বলেনি সে বছর। (Diwali 2023)
১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা পায় দেশ। সে বছর ১২ নভেম্বর ছিল দীপাবলি। অত্যাচারী ইংরেজ শাসক দেশ ছাড়লেও, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, খুনোখুনি এবং শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন মানুষের হাহাকারে জর্জরিত ছিল গোটা দেশ। সেই পরিস্থিতিতে দীপাবলি পালনের কথা মাথায়ও আসেনি কারও।
সেই সময় ফের ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসেন মহাত্মা গাঁধী। মর্যাদা পুরষোত্তম ভগবান রামের অনুগামী ছিলেন তিনি। মানুষের বিবেকবোধকে জাগ্রত করতে গিয়ে জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দেন, তাতেও রামায়ণের কথাই তুলে ধরেন। (Mahatma Gandhi)
আরও পড়ুন: Diwali 2023 : আজ ভূত চতুর্দশী, এই ছোট ছোট বিষয়গুলিতে নজর রাখলে সব ঝামেলার হবে অবসান !
১৯৪৭ সালের দীপাবলির ভাষণে মহাত্মা বলেন, “দীপাবলিকে আলোর উৎসব বলা হয় কেন, তা বোঝা জরুরি। রাম এবং রাবণের যুদ্ধ আসলে শুভ এবং অশুভ শক্তির মধ্যে লড়াই। রাবণকে পরাজিত করে রামরাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাম। দুঃখের বিষয়, আজ দেশে রামরাজ্য নেই। তাহলে দীপাবলির উৎসব পালন হবে কী করে? যাঁদের অন্তরে রাম বিরাজ করেন, তাঁর জয় পালন করতে পারেন।...তার জন্য আলোকসজ্জা দেখতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। হৃদয়ে ভালবাসার আলো জ্বালিয়ে রাখুন।
জাতির উদ্দেশে মহাত্মা আরও বলেন, “হাজার বাজার মানুষ অত্যন্ত দুর্দশায় রয়েছেন। আপনারা প্রত্যেকে বুকে হাত দিয়ে কি বলতে পারবেন যে, হিন্দু, শিখ, মুসলিম, যেই যন্ত্রণাদগ্ধ হোন না কেন, তাঁরা আপনার নিজের ভাই অথবা বোন? এটাই আপনাদের পরীক্ষা। রাম এবং রাবণ আসলে শুভ এবং অশুভের মধ্যেকার চিরকালীন দ্বন্দ্বের প্রতীক। সত্যিকারের আলো অন্তর থেকে প্রতিফলিত হয়।”
উদাহরণস্বরূপ জওহরলাল নেহরু এবং সর্দার বল্লভভাই পটেলের উল্লেখও করেন মহাত্মা। বলেন, “ক্ষতবিক্ষত কাশ্মীর দেখে ভাঙা হৃদয়ে কাশ্মীর থেকে ফিরেছেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু। গতকাল এবং আজ বিকেলেও কংগ্রেস ওয়র্কিং কমিটির বৈঠকে থাকার জোর পাননি। বারামুল্লা থেকে আমার জন্য ফুল এনেছেন উনি। এমন উপহার এমনিতে খুব পছন্দ আমার। কিন্তু লুঠ, অগ্নিসংযোগ, রক্তপাত ভূস্বর্গের সৌন্দর্যকে ম্লান করে দিয়েছে।... সর্দাল পটেলও জুনাগড় গিয়েছিলেন।...”
ভারত এবং পাকিস্তানের উদ্দেশে মহাত্মা বলেন, “জিন্না এবং ভুট্টো ক্ষুব্ধ যে, জুনাগড়কে নিজেদের ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে ভারত বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এই ঘৃণা এবং সন্দেহকে অতিক্রম করতে হবে আমাদের।...আতঙ্কে পালিয়ে যাওয়া মুসলিমদের ফিরিয়ে আনতে না পারলে দীপাবলি পালন করা যাবে না। একই ভাবে, দেশত্যাগী হিন্দু এবং শিখদের প্রতি সমব্যথী না হলে পাকিস্তানও টিকবে না।”
গাঁধীর এই উক্তিকে সম্প্রতি স্মরণ করেন আমেরিকার নিউ ইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামসও। তিনি বলেন, “দীপাবলি শুধুমাত্র ছুটি কাটানোর উৎসব নয়। অন্ধকার ঠেলে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা বহন করে দীপাবলি।... সত্যিই যদি রামায়ণ, সীতা এবং মহাত্মার জীবনদর্শনে বিশ্বাস করি আমরা, তাহলে মহাত্মাকে অনুসরণ করতে হবে। শুধু পুজো করলে হবে না, দৈনন্দিন জীবনে তা অনুসরণও করতে হবে। ভাল মানুষ হতে হবে আমাদের।”