কলকাতা: একদিকে দৃঢ়চেতা রাজনীতিক। অন্যদিকে অন্তরে বয়ে যায় স্নেহের ফল্গুধারা। একদিকে জ্বালাময়ী ভাষণ দেন, অন্যদিকে তাঁরই কলমে সৃষ্টি হয় মন জুড়ানো কবিতার। ধীরে কথা বলা, অত্যন্ত নরম মনের, মিতভাষী এই ব্যক্তি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ছিলেন সাংসদ। রাজনৈতিক অবস্থানের বাইরে গিয়ে নানা স্তরের মানুষজন মাথা ঝোঁকাতেন এই মানুষটার সামনে এলে। তিনি অটল বিহারী বাজপেয়ী।


তাঁর রাজনৈতিক জীবনেও ছিল নানা ওঠানামা। ভারতীয় জন সঙ্ঘ হয়ে জনতা পার্টি হয়ে বিজেপি। জনতা পার্টি সরকারের বিদেশমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তারপরে বিজেপি তৈরির সময় তিনি প্রথমসারির নেতা। হিন্দু নেতা হিসেবে পরিচিত হলেও বাকিদের তুলনায় অনেকটাই আলাদা ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। ১৯৯২ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভাঙার কাণ্ডে দেশ তোলপাড় হয়েছিল। সেই সময় অটল বিহারী বাজপেয়ী হাতেগোনা কয়েকজন গেরুয়া শিবিরের নেতার মধ্যে ছিলেন যিনি এর সমালোচনা করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী পদে বসেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। কিন্তু মাত্র ১৩দিন পদে ছিলেন। কারণ সেই সরকার ভেঙে যায়। এরপর ১৯৯৮, কেন্দ্রে বিপুল পরিমাণ আসন জিতে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। সেই সময়েই তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে বসেন।           


ইন্দিরা-অটল সম্পর্ক:
দেশের রাজনীতিতে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলতেন না। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্তরের দেশের কথা বলতে কট্টর বিরোধীর জ্ঞান ও বাচনের উপরেই ভরসা রেখেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, আর সেই ভরসার দামও দিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেতা। রাজনৈতিত সৌজন্যের দলিল সেই ঘটনা। অটল বিহারীর ভাষণ নাকি পছন্দ করতেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী। UN জেনারেল অ্যাসেম্বলি-তে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে অটল বিহারী বাজপেয়ীকেই পাঠিয়েছিলেন ইন্দিরা। দেশের কারণে, জাতির কারণে বিশ্বমঞ্চে কীভাবে লড়াই করতে হয়, কীভাবে রাজনৈতিক পরিচয়-ভেদাভেদ দূরে সরিয়ে বিশ্বমঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা বা করানো যায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে অনেকেই ইন্দিরা গাঁধী  এবং অটল বিহারী বাজপেয়ীর এই ঘটনার কথা বলে থাকেন। 


নানা মাইলফলক:
তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বে একাধিক মাইলফলক তৈরি হয়েছে দেশে। পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির জন্য বাসে করে পাকিস্তান যাওয়ার আয়োজন হয়। আবার তাঁরই প্রধানমন্ত্রিত্বে কারগিলের যুদ্ধে পাকিস্তানের অনুপ্রবেশকারীদের হঠিয়ে কড়া জবাব দেয় ভারত। অটলের আমলে তৎকালীন পাক-প্রধানমন্ত্রী মুশারফের সঙ্গে আগ্রা সামিট ভেস্তে যায়। ২০০১-এর ভূমিকম্প, ১৯৯৯ এবং ২০০০-এর দুটি সাইক্লোন, খরা, ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধ, সংসদে জঙ্গি হামলা। এমন একাধিক ঘটনার পরেও তাঁর আমলে টাল খায়নি ভারতের অর্থনীতি। ভারতের টেলিকম শিল্পেও বহু কাজ হয়েছে তাঁর আমলে। নতুন টেলিকম নীতি আসে। Telecom Dispute Settlement appellate Tribunal তৈরি হয় তাঁর আমলে। বুনিয়াদি শিক্ষার ক্ষেত্রেও বহু কাজ হয়েছে অটল বিহারি বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বে। পরমাণু শক্তিধর হিসেবে ভারত কয়েক কদম এগিয়ে যায় তাঁর আমলে, ১৯৯৮ সালে। চন্দ্রায়ন ১- প্রকল্পে পাস হয় তাঁর আমলেই। পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য সোনালি চতুর্ভুজ প্রকল্প এবং প্রধানমন্ত্রী গ্রামীন সড়ক যোজনাও তাঁর আমলেই তৈরি। কাশ্মীরের সমস্যা সমাধানেও নয়া পথ খুঁজেছিলেন তিনি। তাঁর স্লোগান ছিল, 'ইনসানিয়ত, কাশ্মীরিয়ত, জমুরিয়ত'  


২০০৫ সালে রাজনীতি থেকে অবসর নেন তিনি। তারপর থেকে থাকতেন কবিতা আর লেখালেখি নিয়েই। শেষদিকে অনেকদিন অসুস্থ ছিলেন ২০১৮ সালের ১৬ অগস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়ী।

আরও পড়ুন: BF.7 ভ্যারিয়েন্টে কি চিনের মতো অবস্থা হতে পারে ভারতের ? যা বলছেন প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী...