কলকাতা : কসবা ভ্যাকসিনেশন কাণ্ড নিয়ে সরগরম রাজ্য। প্রশ্ন উঠছে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে। যদিও এপ্রসঙ্গে আজ অতীন ঘোষ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন, পুরসভা অনুমতি দেওয়ার মালিক নন। যদি কেউ বলে থাকেন পুরসভা মালিক, তিনি আইনটা খুলে দেখিয়ে দিন। ভ্যাকসিনেশন পলিসির কোন জায়গায় বলা আছে যে কেউ যদি ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প করেন তাকে কলকাতা পুরসভার অনুমতি নিতে হবে।


তিনি বলেন, সাধারণ মানুষও জানেন, যাঁদের শিক্ষা অতি নগন্য তাঁরাও জানেন যে ভ্যাকসিন নিতে গেলে তাঁকে প্রথম রেজিস্ট্রেশন করাতে হয়। রেজিস্ট্রেশন করাতে গেলে আধার, প্যান অথবা ভোটার আইডি কার্ড লাগে। রেজিস্ট্রেশন করলে আপনি ভ্যাকসিন নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কনফার্ম করার জন্য আপনার মোবাইলে মেসেজ আসে। এইটা জানার পরেও প্রতারকের কাছ থেকে যাঁরা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাঁরা সব শহরের শিক্ষিত মানুষ। কসবায় যাঁরা নিয়েছেন, তাঁরা সব শিক্ষিত মানুষ। এই শিক্ষিত মানুষগুলো ভ্যাকসিন নেওয়ার পর দীর্ঘদিন কোনও মেসেজ পাননি। কোনও সার্টিফিকেট পাননি। তার পরেও কোনও অথরিটির কাছে অভিযোগ জানাননি। বেশ কয়েকদিন আগে সিটি কলেজে নেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে রাজ্য সরকার, রাজ্য সরকার থেকে বেসরকারি হাসপাতালগুলি-এই তিনের বাইরে কোনও চতুর্থ ব্যক্তি নেই যারা ভ্যাকসিন দিতে পারেন। জুন মাসের মাঝামাঝি নাগাদ কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত বদল করেছে। বলেছে যে, যা ভ্যাকসিন উৎপাদন হবে তার ৭৫ শতাংশ কেন্দ্রীয় সরকার কিনবে। কেন্দ্র সরকারই রাজ্য সরকারকে দেবে। রাজ্য সরকার সরাসরি কিনতে পারবে না। আর ২৫ শতাংশ বেসরকারি হাসপাতালগুলি কিনবে। কিন্তু, ভ্যাকসিন বরাদ্দ করবে বিভিন্ন রাজ্য সরকার। এর মধ্যে তৃতীয় বা চতুর্থ কোনও ব্যক্তি নেই যারা এই ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে ও দিতে পারবেন।


প্রসঙ্গত, সরকারি নথি জাল করে ভুয়ো আইএএস পরিচয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প চালানোর অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার কসবার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ভ্যাকসিনেসন ড্রাইভের আয়োজন করা হয়। সচেতনতা প্রচারে সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল মিমি চক্রবর্তীকেও। সেই ক্যাম্পে গিয়েই নিজের ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেন মিমি। কিন্তু ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে কোনও সার্টিফিকেট না আসায় সন্দেহ হয় মিমির। খোঁজ নিয়ে জানেন, ওই ক্যাম্পে ভ্যাকসিন নেওয়া কারোরই সার্টিফিকেট আসেনি। এরপরেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মিমি। পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারে, দেবাঞ্জন দেব নামে ওই ব্যক্তি ভুয়ো আইএএস অফিসার ও জয়েন্ট কমিশনার অফ কলকাতা কর্পোরেশনের পরিচয় দিয়ে ভ্যাকসিনেশন ড্রাইভের আয়োজন করেছিলেন। পুরসভার অনুমতিও নেওয়া হয়নি অনুষ্ঠানের আগে। কার্যত বেনিয়মে ব্যবহার করা হয়েছে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কটিকেও।


ঘটনার তদন্তভার নেয় লালবাজারের গোয়েন্দা শাখা। তদন্তে নেমে পাণ্ডা দেবাঞ্জন দেবকে জেরা করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, উত্তর কলকাতার একটি কলেজ ও কসবায় ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পের আয়োজন করেছিলেন দেবাঞ্জন।