নয়াদিল্লি: সংঘাত শীঘ্রই যুদ্ধের আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা। ইরান বনাম ইজরায়েল সংঘাতে আমেরিকার প্রবেশ নিয়ে তাই উদ্বেগ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের প্রস্তুতি সেরে রাখছেন ইরানের সর্বোচ্চ শাসক আয়াতোল্লা আলি খামেনেইও। নিজের উত্তরসূরিও তিনি ঠিক করে ফেলেছেন বলে জানা যাচ্ছে। (Ayatollah Ali Khamenei Successor)
ইরান বনাম ইজরায়েল সংঘাত যখন চরমে, সেই সময় থেকেই খামেনেইয়ের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, খামেনেই গোপন আশ্রয়ে রয়েছেন। তাঁর ঠিকানা জানা রয়েছে তাঁদের। কিন্তু কোথায় রয়েছেন খামেনেই, তা স্পষ্ট ভাবে জানাননি। (Iran-Israel War)
কিন্তু শনিবার ইরানের তিন-তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র গবেষণাগারে আমেরিকা আঘাত হানার পর, ফের খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন খামেনেই। তিনি বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন বলে দাবি The New York Times-এর। শুধু তাই নয়, খামেনেই নিজের উত্তরাধিকারীও ঠিক করে ফেলেছেন বলে খবর।
The New York Times জানিয়েছে, খামেনেইকে হত্যার আশঙ্কা রয়েছে। তাই গোপন বাঙ্কারে রয়েছেন তিনি। অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বসস্ত লোকজন ছাড়া কারও সঙ্গে দেখা করেন না। বৈদ্যুতিন যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে কোনও বার্তাও পাঠান না। এতে তাঁর অবস্থান ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে বাঙ্কারে বসেই ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সেরে রাখছেন খামেনেই। নিজের তিন উত্তরাধিকারীর নামও তিনি সুপারিশ করেছেন। ইরানের পরবর্তী সর্বোচ্চ শাসক হিসেবে তিন শীর্ষস্থানীয় ধর্মগুরুর নাম সুপারিশ করেছেন খামেনেই। কিন্তু নিজের ছেলে, মোজতবাকে সেই তালিকায় রাখেননি।
খামেনেইয়ের ছেলে মোজতবাও শিয়া ধর্মগুরু। Islamic Revolutionary Guard Corps-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও রয়েছে তাঁর। খামেনেইয়ের পর তিনিই ইরানের সর্বোচ্চ শাসক নিযুক্ত হবেন বলে জল্পনা ছিল এতদিন। কিন্তু ছেলেকে নিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে খামেনেই নিজের ছেলেকে দেখতে নারাজ বসে জানা গিয়েছে। দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রইসিকেও একসময় খামেনেইয়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু ২০২৪ সালে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর।
শনিবার ইরানের তিনটি পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। তার পর থেকে খামেনেই কোথায়, এই প্রশ্ন আরও জোরাল হয়ে উঠেছে। আগেই ইরানকে আত্মসমর্পণ করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু খামেনেই সাফ জানিয়ে দেন, আমেরিকার সামনে মাথা নোয়ানোর প্রশ্নই ওঠে না। গতকাল হামলার পরও ইরান জানিয়েছে, এর শেষ দেখে ছাড়বে তারা।
কিন্তু খামেনেইয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ কী, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। বিদেশি সংবাদমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, পুরোদস্তুর হামলা নেমে এলে কী হতে পারে, এখন থেকেই তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন খামেনেই। এতে যে তাঁর প্রাণ চলে যেতে পারে, তা বিলক্ষণ জানেন তিনি। আর তাতেি পরবর্তী সর্বোচ্চ শাসক বেছে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনজনের নামও সেই মর্মে সুপারিশ করেছেন তিনি।
ইরানে সর্বোচ্চ শাসক নির্বাচন প্রক্রিয়া চলে মাসের পর মাস ধরে। কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিয়মের হেরফের হতেই পারে। জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক বিষয় বিভাগের অধ্যাপক ভি নাসির জানিয়েছেন, রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎকেই এই মুহূর্তে গুরুত্ব দিচ্ছেন খামেনেই। সেই মতো পরিকল্পনা সেরে রাখছেন। ইরানের সর্বোচ্চ শাসক হওয়ার অর্থ, অভূতপূর্ব ক্ষমতার অধিকারী হওয়া। দেশের সেনাবাহিনীর প্রধানও সর্বোচ্চ শাসক, তিনি বিচারবিভাগেরও প্রধান, প্রশাসনেরও প্রধান, শিয়া ধর্মাবলম্বীদের অভিভাবকও।
১৯৭৯ সালে রহল্লা খোমেইনির মৃত্যুর পর ইরানের সর্বোচ্চ শাসক নিযুক্ত হন খামেনেই। তাঁর কিছু হয়ে গেলে, ক্ষমতা হস্তান্তরে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, কোনও ধন্দ যেন না থাকে, এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। ৮৮ জন ধর্মগুরুকে নিয়ে তৈরি Assembly of Experts-ই ইরানের সর্বোচ্চ শাসক নিযুক্ত করে। খামেনেইয়ের কিছু হলে, তাঁর উত্তরাধিকারী নিয়োগ করবে তারাই। ট্রাম্প যদিও জানিয়েছেন, খামেনেইয়ের ঠিকানা জানে আমেরিকা। কিন্তু এখনই তাঁকে হত্যার কোনও পরিকল্পনা নেই। কিন্তু ইজরায়েল কোনও রাখঢাক করেনি। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইজরায়েল কাৎজ পরিষ্কার জানান, খামেনেইকে বাঁচিয়ে রাখা উচিত হবে না।