নয়াদিল্লি: সংখ্য়ালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় মুখ পুড়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। সেই আবহেই বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় সংস্কার ঘটাতে উদ্যোগী হলেন দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস। দেশের মুদ্রা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দিলেও, নোটে কান্তাজিউ মন্দিরের ছবি ছাপল তাঁর সরকার। এমনকি বৌদ্ধ মঠও জায়গা পেল নোটে। তবে সেই নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে সোশ্য়াল মিডিয়া। সংখ্য়ালঘু নাগরিক যেখানে মুসলিম, সেখানে নোটে মন্দিরের ছবি থাকবে কেন প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ আবার সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে দেশে সব ধর্মের মানুষের বাস যখন, সকলের প্রতিনিধিত্বও জরুরি। (Bangladesh Currency Note)

২০ টাকার (বাংলাদেশের মুদ্রা) নোটে কান্তাজিউ মন্দিরের ছবি ছাপা হয়েছে। নোটের উল্টো পিঠে রয়েছে দেশের জাতীয় ফুল শাপলার ছবিও। পাশাপাশি, ২০ টাকার নোটে জায়গা পেয়েছে পাহাড়পুরের বৌদ্ধ মঠও, যেটি নগাঁওয়ের রাজশাহি ডিভিশনে অবস্থিত। ব্য়াঙ্ক থেকে নতুন টাকা হাতে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করেছেন অনেকেই। (Kantajew Temple)

১৯৮৫ সালে ওই বৌদ্ধ মঠটি UNESCO হেরিটেজের স্বীকৃতি পায়।  আট শতকে, পাল বংশের আমলে সেটির নির্মাণ হয়। সেখানকার টেরাকোটার কাজ আজও সকলের নজর কাড়ে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের ১০০ টাকার মোটে সাত-গম্বুজ মসজিদ, ৫০ টাকার নোটে তারা মসজিদ এবং ১০ টাকার নোটে বৈতুল মুকাররম মসজিদের ছবি রয়েছে। ২০ টাকার নোট থেকে বঙ্গবন্ধু ছবি বাদ দিয়েছে ইউনূস সরকার।

গত বছর বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ইউনূস। কিন্তু নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ক্ষমতায় আসার পরও স্থিতাবস্থা ফেলেনি বাংলাদেশে। বরং সাম্প্রদায়িক হিংসা, লুঠপাট চরমে ওঠে। বেছে বেছে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্য়াচারের অভিযোগ সামনে আসে, মন্দির ভাঙার অভিযোগও ওঠে। তার ঠিক পর পরই নোটে কান্তাজিউ মন্দিরকে জায়গা দিল ইউনূস সরকার। 

বাংলাদেশের স্থাপত্যের ইতিহাসে মন্দিরগুলির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপাসনাস্থল হিসেবেই নয়, পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সহাবস্থানের প্রতীক হয়ে রয়েছে সেগুলি। হিন্দু পুরাণেও সুন্দরপুর ইউনিয়নের কান্তনগর গ্রামে অবস্থিত কান্তাজিউ মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়। জানা যায়, ওই অঞ্চলেই শ্রীকৃষ্ণের যুদ্ধ-বিগ্রহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। শ্রীকৃষ্ণের ১০৮টি নামের মধ্যে একটি শ্রীকান্ত। তাঁকে রুক্মিণীকান্তও বলা হয়, রুক্মিণীর স্বামী হিসেবে।

সেই নামানুসারেই মন্দিরের নামকরণ করেন সেখানকার জমিদার, মহারাজা প্রাণনাথ।  ১৭০৪ সালে তিনি মন্দিরের নির্মাণকার্য শুরু করেন, যা শেষ হয় ১৭৫২ সালে, তাঁর ছেলে মহারাজা রামনাথের হাতে। আগে ওই গ্রামের নাম ছিল শ্যামনগর। মন্দির নির্মাণের পর নাম হয় কান্তনগর। শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর স্ত্রী রুক্মিণীর প্রতিই মন্দিরটি উৎসর্গ করা হয়।

২০১৫ সালে ওই কান্তাজিউ মন্দিরে বোমা হামলাও হয়। রাসমেলা চলাকালীন বোমা ছোড়া হয়। হামলার সঙ্গে নাম জড়ায় জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের। ওই সংগঠনের সঙ্গে ISIS-এর যোগসূত্র পাওয়া যায়। মন্দির চত্বরে একটি মসজিদ নির্মাণে তৎপরতা দেখা দেয়। গতবছর সেই নিয়ে পরিস্থিতি উত্তাল হয়। প্রতিবাদে শামিল হন বাংলাদেশের হিন্দুরা।