অনির্বাণ বিশ্বাস ও কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা : আজ থেকে ২২ বছর আগে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। সেই মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বেই গঠিত হতে চলেছে বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার। কিন্তু অশান্ত বাংলাদেশে কি শান্তি ফেরাতে পারবেন নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত মহম্মদ ইউনূস ? পারবেন মৌলবাদীদের ওপর রাশ টানতে ? তাঁর ওপর কিন্তু ক্রমেই বেড়ে চলেছে প্রত্যাশার চাপ। 


এখনও অশান্ত বাংলাদেশ। ছাত্র আন্দোলনের মধ্য়ে দিয়ে বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর, দেশজুড়ে যে রাহাজানি চলছে, তার নেপথ্য়ে কারা ? কট্টরপন্থী মৌলবাদীরা ? প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ঢুকে লুঠপাট-হরিণের পেছনে ছুটে বেড়ানো...জেল ভেঙে বন্দিদের ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া এসব কি কখনও আন্দোলনকারী ছাত্ররা করতে পারে না কি ? গাজীপুরের কাশিমপুর জেল থেকে ২০৯ জন বন্দি পালিয়ে গেছে। কারা করাচ্ছে এসব ? এইসব প্রশ্নের মধ্য়েই বাংলাদেশের দায়িত্ব নিতে চলেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূস।

অন্তবর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে বৃহস্পতিবারই শপথ নিতে পারেন তিনি। এই চরম ডামাডোলের মধ্য়ে, সঙ্কটকাল থেকে বাংলাদেশকে কীভাবে বের করবেন মহম্মদ ইউনূস ? পারবেন অশান্তি থামাতে ? পারবেন মৌলবাদীদের ওপর রাশ টানতে ? বিএনপি-জামাতের সঙ্গে তাঁর কী সমীকরণ হবে ? নোবেলজয়ীর ওপর প্রত্যাশার অগাধ চাপ।

দেশে ফেরার আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস বলেছেন, 'সরকারের প্রতি সাধারণের আস্থা দ্রুত পুনরুদ্ধার করা জরুরি। আমাদের শান্ত থাকতে হবে, নতুন নির্বাচনের জন্য আমাদের একটি পথ নির্দেশিকা তৈরি করতে হবে এবং বাংলাদেশের অসাধারণ সব সম্ভাবনা পূরণের জন্য নতুন নেতৃত্বকে প্রস্তুত করতে আমাদের কাজ করতে হবে।'


এ প্রসঙ্গে ইতিহাসবিদ সুরঞ্জন দাস বলেন, 'এটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে, কারণ ওঁর লেখার মধ্যে যে ধ্যান-ধারণাগুলো এসেছে সেই ধ্যান-ধারণা কিন্তু জামাতের ধ্যান-ধারণার সঙ্গে এক নয়। তিনি যেভাবে বলেছেন, চিন্তা করেছেন তার সঙ্গে কীভাবে মেলাবেন...এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। যে রাজনীতির মধ্যে দিয়ে জামাত উঠে এসেছে, তাতে ভারত বিরোধিতা স্পষ্ট। সেটাকে উনি কী করে সামাল দেবেন ?'

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারে আর কারা থাকবেন ? সূত্রের খবর, ছাত্রনেতাদের তরফে ১০-১৫ জনের নামের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে । যাতে নাম রয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আইনজীবী সারা হোসেন, আইনজীবী ও পরিবেশবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের মতো সমাজের নানা স্তরের বিশিষ্টদের।
নাম রয়েছে ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদেরও। সূত্রের খবর, এর বাইরে বৈঠকে রাষ্ট্রপতি একজন মুক্তিযোদ্ধাকেও রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। অন্তবর্তী সরকারে থাকতে পারেন একজন সংখ্যালঘু ও একজন আদিবাসীও।


বিধ্বস্ত দেশ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্য়বসা বাণিজ্য়। সংখ্য়ালঘুদের আস্থা তলানিতে। এই পরিস্থিতিতে কি বাংলাদেশকে ছন্দে ফেরাতে পারবেন মহম্মদ ইউনূস ? পারবেন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে ? কত দ্রুত সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করাতে পারবে তাঁর সরকার ?