অর্ণব মুখোপাধ্যায় ও ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা: জীবদ্দশায় লালন সাঁইয়ের মুখে শোনা গিয়েছিল ,'কেউ মালা কেউ তসবিহ গলে, তাইতে কি জাত ভিন্ন বলে।আসা কিংবা যাওয়ার কালে, জাতের চিহ্ন রয় কারে।' প্রয়াণের ১৩৩ বছরের পরে, মানবতাবাদের সেই প্রচারক মৌলবাদীদের কোপে পড়লেন!বাংলাদেশের মৌলবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ও কওমি ওলামা পরিষদ, দুই সংগঠনের বাধায়, টাঙ্গাইলে মধুপুর উপজেলায় বন্ধ করে দিতে হল লালন স্মরণোৎসব!


এর আগে, বেছে বেছে হিন্দুদের বাড়িতে হামলা দোকানপাট ভাঙচুর, মন্দিরে আক্রমণ, লুঠপাট, সম্পত্তি দখল, মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে নৈরাজ্য়ের এমন গুচ্ছ গুচ্ছ ছবি দেখে শিউরে উঠেছে গোটা বিশ্ব। এবার টাঙ্গাইলে দুই মৌলবাদী সংগঠনের রোষে পড়লেন সর্বধর্মসমন্বয়ের পতাকাবাহী লালন ফকির! বাংলাদেশের দৈনিক সংবাদপত্র 'প্রথম আলো' সূত্রে খবর,লালন ফকিরের ১৩৪তম তিরোধান বর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে, ১২ ফেব্রুয়ারি, বুধবার রাত ৮টা থেকে মধুপুর উপজেলার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লালন স্মরণোৎসব হওয়ার কথা ছিল।


আয়োজক সংস্থা মধুপুর লালন সংঘের দাবি, লালনের গান মৌলবাদীদের মতাদর্শের পরিপন্থী, এই দাবি করে সেই অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য করে হেফাজতে ইসলাম ও কওমি ওলামা পরিষদ। যার নিন্দা করে তসলিমা নাসরিন তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন,'সরকার কি হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেবে?'টাঙ্গাইলে লালন উৎসব বন্ধ করাই শুধু নয়, নাম বদলে দেওয়া হয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে লালন ফকিরের নামাঙ্কিত হলেরও!
 
লালন সাঁই মিলয়াতনের নাম বদলে নতুন নামকরণ করা হয়েছে টিএসসি ভবন। পরপর এই দুটো ঘটনা সামনে আসতেই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে এপার বাংলায়। প্রাক্তন BSF কর্তা সমীর মিত্র বলেন, লালনের গুরুত্ব বোঝেই না। প্রাক্তন সেনাকর্তা  দেবাশিস দাস বলেন, ওরা যে নতুন শরিয়ত আইন বলবৎ করতে চাইছে, সেখানে গান শোনাটাই অপরাধ।২০১০-এ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'মনের মানুষ' উপন্যাস অবলম্বনে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় ছবি বানিয়েছিলেন পরিচালক গৌতম ঘোষ। যেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল লালন ফকিরের জীবনবোধ। বর্তমানে সেই বাংলাদেশেই লালন স্মরণোৎসব বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দায় সরব হয়েছেন 'মনের মানুষ'-এর চিত্র পরিচালক।


আরও পড়ুন, 'হাসিনার আমলে বিরোধিতা করলেই রাখা হত এই টর্চার সেলে..', ভয়াবহ সেই 'আয়নাঘরে' প্রবেশ ইউনূসের


চিত্রপরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, 'আমি যখন মনের মানুষ শ্যুটিং করতে গেছি, সেসময় খুব ভাল অবস্থা ছিল। কিন্তু এখন এগুলো হওয়া উচিত নয়। আর হলের নাম পরিবর্তন করে কোনও লাভ হয় না। 'শিল্পী  দিব্যেন্দুদাস বাউল বলেন, এর আগে কুষ্টিয়াতে অনুষ্ঠান করেছি। কোনও সমস্যা হয়নি। এখন এই অবস্থা হচ্ছে।' মানবতাবাদ ও জীবনদর্শনের প্রচারে যে লালন সাঁই তাঁর জীবন উজাড় করে দিয়েছিলেন।যে লালন ফকির তাঁর সহজিয়া ভাষায় শিখিয়েছিলেন ধর্মের ঊর্ধ্বে মানুষ, মহম্মদ ইউনূসের আমলে তাঁর ভক্তদেরই কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা হচ্ছে!এ কোন বাংলাদেশ?