ঢাকা: আদানি গোষ্ঠীর থেকে কেনা বিদ্যুতের পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে আনল বাংলাদেশ। বলা হয়েছে, শীতকালে বিদ্যুতের ততটা চাহিদা নেই। তাই আগের তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ কেনা হবে আদানি গোষ্ঠীর কাছ থেকে। সোমবার ঢাকার তরফে এই ঘোষণা করা হয়েছে। বকেয়া বিদ্যুতের বিল নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই এমন সিদ্ধান্ত নিল মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। (Bangladesh News)
শেখ হাসিনার আমলে আদানিদের থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি হয় বাংলাদেশে। সেই নিয়ে গোড়া থেকেই বিতর্ক। নরেন্দ্র মোদিকে খুশি করতে বেশি দামে আদানিদের থেকে বিদ্যুৎ কেনার অভিযোগ ওঠে হাসিনার বিরুদ্ধে। হাসিনা সরকারের পতনের পরও ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সেই মর্মে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছিল আদানি গোষ্ঠী। কিন্তু সঞ্চিত বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ার তলানিতে এসে ঠেকায়, বকেয়া টাকা নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়। (Adani Power)
২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, ২৫ বছর বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা ছিল আদানি গোষ্ঠীর। বকেয়া বিল নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ৩১ অক্টোবর থেকে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের পরিমাণ কমিয়ে আনে আদানিরা। অন্য দিকে, বাংলাদেশেও ওই বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। আর সেই আবহেই বাংলাদেশ সরকার আদানিদের থেকে আগের তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ কেনার সিদ্ধান্ত নিল।
হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যে গণ আন্দোলনের সূচনা ঘটে, তাতেও এই বিদ্যুৎ চুক্তির প্রসঙ্গ ছিল। পায়রা এবং রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে আদানিরা বেশি দাম নিচ্ছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের। তাদের দাবি, আদানিরা যেখানে ৯৬ ডলার করে দাম ধরছে, সেখানে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র দর ধরছে ৭৫ ডলার। বকেয়া মেটাতে দেরি হলে আদানিরা ১৫ শতাংশ হারে সুদ নিলেও, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র সুদ নিচ্ছে না। ফলে একতরফে ভাবে আদানিরা এই চুক্তির বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানিয়েছে, আদানিদের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি তদন্ত করে দেখা হবে।
হাসিনা বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০১৭ সালে আদানিদের সঙ্গে বিদ্যুৎচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ঢাকার। ঠিক হয়, ঝাড়খম্ডে আদানিদের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১০০ শতাংশ বিদ্যুৎই কিনবে তারা। কিন্তু আদানিরা যে টাকায় বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে, তা অন্য সংস্থার থেকে অনেকটাই চড়া বলে অভিযোগ। ভারতের অন্যান্য সংস্থা থেকে বাংলাদেশ ইউনিট প্রতি গড়ে ৮ টাকা ৭৭ পয়সা (বাংলাদেশি মুদ্রায়) দরে বিদ্যুৎ কিনলেও, আদানিদের কাছ থেকে ১৪ টাকা ২ পয়সা দরে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছিল। নরেন্দ্র মোদিকে খুশি করতেই আদানিদের থেকে চড়া দামে হাসিনা বিদ্যুৎ কিনতে রাজি হন বলেও রয়েছে অভিযোগ।
বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে ভারতেও। ঝাড়খণ্ডের গোন্ডায় আদানিদের ওই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চলে অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা কয়লার উপর নির্ভর করে। বিদেশ থেকে আনা কয়লায় শুল্কছাড় থেকে, যন্ত্রপাতির উপর GST ছাড়, আদানিদের বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ মোদি সরকারের বিরুদ্ধেষ এমনকি পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে যে কর দিতে হয় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে, আদানিদের ক্ষেত্রে তা মাফ করে দেওয়া হয় বলেও জানা যায়। ঝাড়খণ্ডে ওই কয়লা খনি নির্মাণের জন্য যেভাবে জমি নেওয়া হয়, তা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। বিদেশে রফতানি করতে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ হলেও, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি দেখে রীতিমতো আইন সংশোধন করে আদানিদের ওই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দরজা ভারতীয় বাজারে খুলে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ বিরোধীদের।
জানা গিয়েছে, আদানি গোষ্ঠীকে ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারপার্সন রেজাউল করিমকে উদ্ধৃত করে লেখে, 'শীতকালে চাহিদা এমনিতেই কম। তাই ওঁদের বলে দিয়েছি, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে দু'টি ইউনিট চালানোর প্রয়োজন নেই'। গোড্ডার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে আদানিরা। ১ নভেম্বর থেকেই সেখানে ন্যূনতম বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। একটি ইউনিট বন্ধ রাখা হয়েছে। পুনরায় কবে আগের মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এর আগের বছর শীতেও আদানিদের কাছ থেকে মাসে ১০০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ কিনেছিল বাংলাদেশ।