ঢাকা: দীর্ঘ পাঁচ বছর কোনও খোঁজ ছিল না। বেঁচে আছেন, না নেই, সেই নিয়ে তৈরি হয়েছিল সংশয়। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অবশেষে খোঁজ মিলল মানবাধিকার কর্মী মাইকেল চাকমার। তিনি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গিয়েছে। আপাতত গোপন আশ্রয়ে, নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁকে। (Michael Chakma)


United Peoples Democratic Front (UPDF) সংগঠনের নেতা মাইকেল, মানবাধিকার কর্মী। চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় সেনার অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। রাত ১০টা নাগাদ ফিরে আসবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থেকে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। (Bangladesh Situation)


মাইকেল নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর গোটা দেশে শোরগোল পড়ে যায়। দেশের হাইকোর্ট, জাতীয় মানবাধিকার সংগঠন তদন্তের নির্দেশ দিলেও, হাসিনা সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি বলে অভিযোগ ছিল। এমনকি United NAtions Committee Against Tortur Committee-ও সেই নিয়ে তদ্বির করে। মাইকেলের বোন আদালতের দ্বারস্থ হলে, পুলিশের আইজি জানান, বাংলাদেশের কোনও জেলে মাইকেল চাকা নামের কেউ রয়েছেন বলে তাঁদের কাছে খবর নেই। ফলে মাইকেলও গুম খুন হয়ে থাকতে পারেন বলে ধরে নিয়েছিলেন অনেকেই। 


কিন্তু মাইকেল বেঁচে আছেন বলে খবর মিলল বুধবার। UPDF জানিয়েছে, হাসিনা সরকারের গোপন বন্দিশিবির, যা 'আয়নাঘর' নামেও পরিচিত, সেখানে গত পাঁচ বছর ধরে বন্দি করে রাখা হয়েছিল মাইকেলকে। বাংলাদেশ সরকারের ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইনটেলিজেন্স ওই বন্দি শিবিরের তদারকি করত। 


UPDF-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট কুমার চাকমা বলেন, "আওয়ামি লিগের ফ্যাসিস্ত সরকার মাইকেলকে তুলে নিয়ে যায়। দীর্ঘ পাঁচ বছর তাঁকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল।" এই ঘটনায় কে বা কারা জড়িত ছিল, তা খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন তিনি। সংগঠনের নেতা আনন্দ প্রকাশ চাকমা। সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দাবি করেছেন তিনি। সংগঠনের সদস্য ফুইকাচিং মর্মা জানিয়েছেন, মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত মাইকেল। ওঁর বিশ্রামের প্রয়োজন।


জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে চোখে ফেট্টি বাঁধা অবস্থায় চট্টগ্রামে ছেড়ে দেওয়া হয় মাইকেলকে। UPDF-এর অন্যতম সংগঠক অনুজ্ঞ মর্ম জানিয়েছেন, বাড়ি ফিরেছেন মাইকেল। নিরাপত্তার খাতিরে আপাতত গোপন আশ্রয়ে রাখা হয়েছে তাঁকে। শুধু মাইকেলই নন, বাংলাদেশ সেনার প্রাক্তন অফিসার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (ডিসমিসড) আব্দুল্লাহিল আমন আজমি এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মীর আহমেদ বিন কাসেম ওরফে আরমানও বাড়ি ফিরেছেন।  ২০১৬ সালের ২৩ অগাস্ট নিখোঁজ হয়ে যান প্রাক্তন সেনা অধিকারিক আজমি এবং ওই বছর ৯ অগাস্ট নিখোঁজ হয়ে যান আরমান। 


২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক সংস্থা Human Rights Watch-এর রিপোর্টে বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে ৬০০-র বেশি সমাজ তথা মানবাধিকার কর্মী, এমনকি রাজনীতিক নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের গায়েব করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয় রিপোর্টে। পরে কয়েক জন মুক্তি পান, কেউ কেউ বেঁচে নেই বলে জানা যায়। কিন্তু এখনও বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। সোমবার হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর, নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এমন রাজনৈতিক বন্দিদের পরিবার-পরিজনরা লাগাতার DGFI-এর সদর দফতরের বাইরে ভিড় জমাচ্ছেন। আপন জনকে ফিরে পাওয়ার প্রতীক্ষায় রয়েছেন তাঁরা। 


আরও পড়ুন: Minority Hindus in Bangladesh: কমতে কমতে কোণঠাসা, বাংলাদেশে আবারও হামলার মুখে, অসহায় হিন্দুরা ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়