কলকাতা: আপাতত সেনার শাসনে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার পদত্য়াগ ও দেশছাড়ার পর, সাংবাদিক বৈঠক করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান। সে দেশের জনগণের উদ্দেশে গতকাল তিনি বলেন, আমি সমস্ত দায়িত্ব নিচ্ছি, আপনারা আমাকে সাহায্য করুন। এর আগেও, বারবার সেনা অভ্য়ুত্থানের সাক্ষী থেকেছে বাংলাদেশ। 


বাংলাদেশে সেনাশাসন: আন্দোলনের আঁচে ফুটছে বাংলাদেশ। তড়িঘড়ি প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়ে, দেশ ছাড়তে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। আপাতত সেনার শাসনে দেশ। অতীতেও পদ্মাপাড়ের এই দেশ বারবার সেনা অভ্য়ুত্থানের সাক্ষী থেকেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে, ১৮ বছরই কেটেছে সেনাবাহিনীর শাসনে। ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনটি বড় মাপের সেনা অভ্যুত্থানের সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ। দুই প্রেসিডেন্টকে সেনার হাতে নিহত হতে দেখেছে। শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়াউর রহমান। এছাড়া গত সাড়ে পাঁচ দশকে বাংলাদেশে একাধিক ছোট-বড় অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্য়র্থও হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট হত্য়া করা হয় বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্য়দের। শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ। তিনি নিজেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। তৎকালীন বাংলাদেশের ৩ সেনাবাহিনীর প্রধান, পুলিশের প্রধান এবং বাংলাদেশ রাইফেলস নতুন সরকারকে সমর্থন করে। কিন্তু, এই সরকারের মেয়াদ বেশিদিন ছিল না। খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতি হলেও সেনাবাহিনীর মধ্য়েই তৈরি হয় সংঘাত। মুজিব হত্যার পর তৎকালীন সেনাবাহিনীর প্রধান করা হয়, জিয়াউর রহমানকে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ।


১৯৭৫ সালে ৩ নভেম্বর সরকারের ওপর আঘাত হানেন মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ। যার পরিণতি ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেনা অভ্যুত্থান। শুরুতেই বন্দি করা হয় সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে। দেশে আবার যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়। খালেদ মোশারফের অভ্যুত্থান যখন সংগঠিত হচ্ছিল, তখন রাতেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আট থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের চার সিনিয়র নেতাকে গুলি করে হত্য়া করা হয়। খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে এই অভ্যুত্থান ছিল ক্ষণস্থায়ী। এটি টিকে ছিল মাত্র চারদিন। জিয়াউর রহমানকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে মুক্ত করে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা। হত্যা করা হয়, জেনারেল খালেদ মোশাররফকে। জেনারেল জিয়াউর রহমান তার পাঁচ বছরের শাসনকালে প্রায় ২১টি অভ্যুত্থানের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ২১টি অভ্যুত্থান থেকে বেঁচে গেলেও ২২ নম্বরটিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর উপরাষ্ট্রপতি আব্দুর সাত্তার রাষ্ট্রপতি হন। সেই সময়, আব্দুস সাত্তার সরকারের। বিভিন্ন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন তৎকালীন সেনা প্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল হুসেন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি নিজেকে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করেন। জেনারেল এরশাদের পতনের পর, ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ফের নির্বাচন ব্যবস্থা চালু হয়।


২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি ফের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী। তবে, সেই সময় সেনাবাহিনী সরাসরি ক্ষমতা দখল না করলেও, তাদের মনোনীত অসামরিক ব্য়ক্তিদের নিয়ে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার তৈরি করা হয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের বিধি-নিষেধের কারণে তৎকালীন সেনাপ্রধান সরাসরি ক্ষমতার চাবিকাঠি হাতে নেননি। প্রাথমিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুসকে। তিনি রাজি না হওয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন ফখরুদ্দিন। ১৭ বছর পর বাংলাদেশে ফিরল সেই অস্থিরতার ছবি। ফের একবার সেনার শাসনে পদ্মাপাড়ের দেশ।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: Bangladesh Update: বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাড়ি শেখ হাসিনার, ফিরে আসছে ১৯৭৫ সালের প্রসঙ্গ