ঢাকা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরও নতুন করে উত্তাল বাংলাদেশ। এবার রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে অশান্তি ছড়াল পড়শি দেশে। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চেয়ে মঙ্গলবার রাতেই শয়ে শয়ে মানুষজন বঙ্গভবনে ঢুকে পড়েন। বুধবার সকালেও পরিস্থিতি তেমন বদলায়নি। বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ চলছে। রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সাহাবুদ্দিন পদত্যাগ না করা পর্যন্ত সেখান থেকে নড়বেন না বলে জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। 


গত সপ্তাহে সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন সাহাবুদ্দিন। সেখানে তিনি জানান, ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন বলে চাউর হলেও, শুধুমাত্র মুখের কথাই শুনেছেন তিনি। হাসিনার পদত্যাগপত্র হাতে পাননি। হাসিনা পদত্যাগ করেছেন বলে কোনও প্রমাণ নেই। সাহাবুদ্দিন বলেন, "বহুবার পদত্যাগপত্রটি পাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। হতে পারে, ওঁর হাতে সেই সময়ও ছিল না।" তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়। হাসিনা যদি পদত্যাগ না করে থাকেন, সেক্ষেত্রে ইউনূসের সরকার একেবারে বেআইন বলে গন্য হতে পারে বলে কাটাছেঁড়া শুরু হয়। 


এমন পরিস্থিতিতে সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন দেশের আইন বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। কোনওরকম রাখঢাক না করে রাষ্ট্রপতি মিথ্যে বলছেন বলে দাবি করেন তিনি। এমন মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি শপথভঙ্গ করেছেন বলেও দাবি করেন নজরুল । রাষ্ট্রপতি পদ থেকে তাঁকে অপসারণের সাংবিধানিক বিধানও রয়েছে বলে জানান। এর পরই রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি উঠতে শুরু করে। নতুন করে অশান্তি ছড়ায় মঙ্গলবার থেকে।


এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন  সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন BNP নেতৃত্ব। রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সাহাবুদ্দিনের অপসারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাওয়া হয় তাঁদের কাছে। সরাসরি কোনও মন্তব্য না করলেও, BNP নেতৃত্ব জানিয়েছেন, নতুন করে দেশে যাতে সাংবিধানিক সঙ্কট না দেখা দেয়, সেই নিয়েই কথা হয়েছে। তবে এই বৈঠক নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।


মঙ্গলবার রাত থেকেই বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ চলছে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান বিক্ষোভকারীরা। এই মুহূর্তে সেখানে পুলিশ ও RAB মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাও নামানো হয়েছে বঙ্গভবনের সামনে। সামনের রাস্তায় কাঁটাতারের বেড়া, ব্যারিকেড বসানো হয়েছে, তা সত্ত্বেও বহু মানুষ ভিড় করেছেন। শুধু সাধারণ মানুষজনই নন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছেন ঢাকা এবং অন্য জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিও। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই সাহাবুদ্দিনকে পদ ছাড়তে হবে বলে দাবি তুলেছেন সকলে।


রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারেও সমাবেশের আয়োজন হয়। শাহবাগে বিক্ষোভ দেখান বহু মানুষ। চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, পাবনা, কক্সবাজার, ফেনী, ঝিনাইদহেও বিক্ষোভ হচ্ছে। জাহাঙ্গিরনগর, রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুর থেকেই বিক্ষোভ, মিছিল চলছে। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, সেদিকে তাকিয়ে সকলে।