কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের সূচনায় নিজের ভাষণে রাজ্যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী হলে নাম বাদ পড়ে ডিটেনশন সেন্টারে ঠাঁই হতে পারে, এমন আশঙ্কা, উত্কন্ঠায় একাধিক মানুষের মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুললেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। প্রস্তাবিত দেশব্যাপী এনআরসির ভাবনার বিরুদ্ধে বরাবর সরব রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে এনআরসি করতে হলে তাঁর মৃতদেহের ওপর দিয়ে করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন। রাজ্যপাল ভাষণে এনআরসি নিয়ে শাসক দল, সরকারের অবস্থানের প্রতিধ্বনি করে আশঙ্কা, ভীতির ফলে ঘটে যাওয়া মৃত্যুর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ‘প্রস্তাবিত এনআরসির জেরে আতঙ্কে নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু’তে শোক জানিয়েছেন। বলেছেন, বর্তমানে আমাদের দেশ এক জটিল সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। সংবিধানের মৌলিক মূল্যবোধ, নীতিগুলি বিপদের মুখে।
পাশাপাশি সিএএ, এনপিআর ও কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেন তিনি।
এদিন ধনকড়ের ভাষণের সময় শাসক দলের বিধায়করা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও এনআরসি বিরোধী বার্তা লেখা ব্যাজ, টি-শার্ট পরে উপস্থিত ছিলেন। বিধানসভায় প্রবেশের সময় তাঁদের অভিবাদন জানান রাজ্যপাল।
ঘটনাচক্রে এদিন রাজ্যপাল যে ভাষণ দিয়েছেন, সেটা সরকারেরই তৈরি করা। রাজ্যে দায়িত্ব নিয়ে আসার পর থেকে ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে ধনকড়ের বারবার সংঘাত, দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে আজও রাজ্যপালের ভাষণ ঘিরে জল্পনা তৈরি হয়েছিল, নতুন করে কি কোনও বিরোধ তৈরি হবে দুপক্ষের। বৃহস্পতিবারই রাজ্যপাল ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তিনি সরকারের বেঁধে দেওয়া ভাষণে কিছু অদল-বদল করবেন। মন্ত্রিসভা তাঁর বক্তব্য মানতে অস্বীকার করে জানিয়ে দেয়, তারা এমন হতে দিতে নারাজ।
অতীতে ধনকড় মমতা সরকারের সিএএ ও এনআরসি-বিরোধিতার সমালোচনা করেছেন। ডিসেম্বরেই তিনি দাবি করেন, রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি ও সিএএ চালু হবে না বলে ঘোষণা করে গণমাধ্যমগুলিতে যে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, তা বন্ধ করতে হবে। কেননা এমন প্রচার, বিজ্ঞাপন অসাংবিধানিক।
এই প্রেক্ষাপটে আজ নিজের ভাষণে তিনি রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাত এড়ালেন বলে মনে করা হচ্ছে।