বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুরপূর্ব: মহিষাদলে 'নন্দকুমার মডেল' সফল হলেও, মেদিনীপুরের তমলুকের চাঠরা-গাঠরা সমবায় সমিতির নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হল তৃণমূল। সেখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে খাটল না বাম-বিরোধী জোটের কৌশল। বরং সেখানে সমবায় সমিতির নির্বাচনে ধাক্কা খেল বাম-বিজেপি সমর্থিত ঐক্যমঞ্চ।


মহিষাদলে খাটলেও, তমলুকে খাটল না ‘নন্দকুমার মডেল'। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কাজে এল না নতুন কৌশল। সমবায় সমিতির নির্বাচনে ধাক্কা খেল বাম-বিজেপি সমর্থিত ঐক্যমঞ্চ।


তমলুকের খারুইয়ের চাঠরা-গাঠরা কৃষি উন্নয়ন সমিতির ভোটে বিপুল জয় পেল তৃণমূল। আবার এ দিনই, মহিষাদলের জগৎপুর শীতলা সমবায় সমিতির ভোটে ধরাশায়ী হয়েছে তৃণমূল। সেখানে নির্বাচনে জয়লাভ করেছে তৃণমূল বিরোধী শক্তি।


তবে ভোটের দিন, সংঘর্ষে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে তমলুক। তৃণমূল বনাম বাম-বিজেপি কর্মীদের সংঘর্ষে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। প্রথমে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। বেধড়ক মারধরও করা হয় বলে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন দুই পক্ষের কর্মীরা। 


তাতে দফায় দফায় সংঘর্ষে তেতে ওঠে তমলুক। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী নামাতে হয়। ব্যাপক লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিশ।  


বিজেপির অভিযোগ, রবিবার তাদের ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেয় তৃণমূল।  ভোটারদের ভয় দেখিয়ে বুথ স্লিপ ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ নিয়ে প্রথমে তৃণমূল-বিজেপি দু’পক্ষের মধ্যে বচসা বাধে। ঝগড়া, চিত্‍কার, চেঁচামেচি শুরু হয়। পরে তা সংঘর্ষের আকার নেয়।


বিজেপি কিসান মোর্চা তথা তমলুক সাগঠনিক জেলা সাধারণ সম্পাদক বামদেব গুছাইত বলেন, "আজ যে নির্বাচন হচ্ছে, তাতে তৃণমূল হারবে। ভোটারদের স্লিপ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আমাদের কর্মীদের মারাত্মক মেরেছে। ইমিডিয়েট ব্যবস্থা না নিলে হেস্তনেস্ত করে দেব। তৃণমূল হারবে জেনে বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসেছে। পুলিশ আমাদের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করেছে। কাল অভিষেক বড় বড় কথা বলেছে। ওর দলের লোকই ওকে মানে না।"


যদি তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, "ওদের কাজই হচ্ছে গণ্ডগোল করা। একা বিজেপি পারবে না। একা বাম পারবে না। কিছু কিছু সমবায় পুরনো মেম্বারশিপের ভিত্তিতে বাম-রাম জোট করে একটা চেষ্টা করছে। সাধারণ রাজনীতিতে ওদের দেউলিয়াপনা মুখোশ খুলে যাবে। সরে যেতে বলেছে, যায়নি। এই জমানায় পুলিশ ধাক্কা আর লাঠি। ওদের জমানায় পুলিশ কথায় কথায় গুলি চালিয়ে লোক মারত।"


সম্প্রতি, নন্দকুমারে সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির নির্বাচনে জয়ী হয়, বাম ও বিজেপি সমর্থিত ঐক্যমঞ্চ। সেখানে ৬৩ আসনের একটিতেও জিততে পারেননি তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা। তবে মহিষাদলের কেশবপুর জালপাই রাধাকৃষ্ণ কৃষি সমবায় সমিতির নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়ে তৃণমূল বিরোধী জোট। এর পর, তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের খারুই গাঠরা কৃষি উন্নয়ন সমিতির ভোটে ঐক্যবদ্ধ হয় তৃণমূল বিরোধীরা। সমবায় সমিতির ৪৩টি আসনের মধ্যে সমঝোতা করে, ২৭টি আসনে প্রার্থী দেয় বিজেপি ও ১৬টি আসনে প্রার্থী দেয় CPM। 


গত মাসের ২২ তারিখ একসঙ্গে মনোনয়ন জমা দেন বাম-বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা। বিজেপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শাস্তি স্বরূপ, গত সোমবার, তমলুকের ৬ সিপিএম নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার ও ২ নেতাকে শো-কজ করেন নেতৃত্ব। কিন্তু, নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গিয়েও কাজে এল না নতুন কৌশল। রবিবার, ভোটের রেজাল্টে দেখা গেল, ৪৩ টি আসনের মধ্যে, তৃণমূল জিতেছে, ৩৯টিতে।  বাম-বিজেপি ঐক্যমঞ্চ পেয়েছে মাত্র ৪টি আসন।