শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কোচবিহার: পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Election) আগে তৃণমূলের (TMC) হাতছাড়া হল কোচবিহারের (Coochbehar) তুফানগঞ্জের অন্দরন ফুলবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত। প্রধান, উপ্রধান ও ৩ সদস্য যোগ দিলেন বিজেপিতে।আর এই ঘটনার জন্য প্রাক্তন জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়ের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতাকেই দায়ী করেছেন তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।



পঞ্চায়েত ভোটের আগে, কোচবিহারে তৃণমূলের বড়সড় ধাক্কা। তৃণমূল পরিচালিত অন্দরন ফুলবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান, ও ৩ সদস্য যোগ দিলেন বিজেপিতে। ফলে, ওই পঞ্চায়েতে এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজেপি। অন্দরন ফুলবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয়ে গেল তৃণমূলের। আর এই গোটা ঘটনার জন্য, কোচবিহারের তৃণমূলে প্রাক্তন জেলা সভাপতি, পার্থ প্রতিম রায়ের দিকে আঙুল তুলছেন বর্তমান, সহ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। 


তিনি বলেন, "তখন পার্থপ্রতিম রায় জেলা সভাপতি ছিলেন। সেই সময় তিনি রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারেননি। যার কারণে তিনি আমাদের মেজরিটি, আমাদের দলের সদস্য, সদস্যদা থাকা সত্ত্বেও, বিজেপির যে ৩ জন ছিল, তাঁর মধ্যে একজনকে তখন প্রধান করা হয়েছিল। তখনই আমি আপত্তি করেছিলাম। যে, এটা ঠিক না। যেহেতু আমাদের ৭ জন আছে, মেজরিটি আছে, আমাদের নিজের দলের ভিতর থেকেই করা উচিত ছিল। সেটা না করাতে, যে আশঙ্কাটা সে সময় করেছিলাম, আজকে সেটাই ঠিক হল।" 


কিন্তু ঠিক কী কারণে এই দোষারোপ? 


অন্দরন ফুলবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ৯টি আসন। ২০১৮’র পঞ্চায়েত ভোটে ৮টি আসনে জয়ী হয় তৃণমূল। ১ টি আসনে জয়ী হন, বিজেপি-র প্রার্থী ধরণীকান্ত বর্মন। ২০১৯ পর্যন্ত পঞ্চায়েতটি ছিল তৃণমূলের হাতে। কিন্তু লোকসভা ভোটে, বিজেপি হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চায়েত সদস্যরাও যোগ দেন গেরুয়া শিবিরে। তখন, পঞ্চায়েত চলে যায় বিজেপির কব্জায়। প্রধান হন, বিজেপি নেতা, ধরণীকান্ত বর্মন। আবার ২০২১-এ বদলে যায় ছবিটা। বিধানসভা ভোটে বিজেপি ধাক্কা খেতেই, তৃণমূলের পালে হাওয়া লাগে। একে একে সব সদস্যরা তৃণমূলে ফিরে আসেন। ধরণীকান্ত বর্মনকে নিজে হাতে, তৃণমূলে যোগদান করান, তৃণমূলের তত্‍কালীন জেলা সভাপতি, পার্থপ্রতিম রায়। 


আরও পড়ুন, তৃণমূল তো ৫০০ দিচ্ছে, বিজেপি এলে ২০০০ টাকা দেবে, 'কথা দিলেন' সুকান্ত


অন্দরন ফুলবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত ফিরে পায় তৃণমূল। প্রধান নির্বাচিত হন সেই ধরণীকান্ত বর্মন। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের আগে, শুক্রবার, সেই প্রধান, ধরণীকান্ত বর্মন, উপপ্রধান, জিতেন বর্মন ও তৃণমূলের সদস্য যোগ দেন বিজেপিতে। সঙ্গে ছিলেন কয়েকশো তৃণমূল কর্মী। তাঁদের হাতে দলের পতাকা তুলে দেন, ২ বিজেপি বিধায়ক, দীপক বর্মন ও মালতী রাভা রায়। ধরণীকান্ত বর্মন বলেন, "ভেবেছিলাম, আরও উন্নয়ন হবে। গিয়ে দেখি শুধু গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তোষণ। তাই ফিরে এলাম বিজেপিতে।" আর এই দল বদলের সিরিজের জন্য, পার্থ প্রতিম রায়ের দিকেই আঙুল তুলেছেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। 


রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, "সেই বিজেপির লোককে প্রধান করার কারণে, সেই বিজেপির ৩ জনের সঙ্গে আরও তৃণমূলের ২ জনকে নিয়ে, আরও কিছু দলীয় কর্মী নিয়ে তারা চলে গেল। সেই সময় এই দূরদর্শিতা থাকলে এটা হত না। রাজনীতির ক্ষেত্রে যে দলেরই হোক, রাজনৈতিক দূরদর্শিতার যদি অভাব হয়, তাহলে কিন্তু রাজনীতিতে সফল হওয়া কিম্বা দলকে সফলতার শীর্ষে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।" 


বর্তমানে, অন্দরন ফুলবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯টি আসনের মধ্যে ৫টি বিজেপির হাতে। ৪ টি তৃণমূলের। আগামী পঞ্চায়েত ভোটে এই ছবিটা কি বদলাতে পারবে তৃণমূল? না আধিপত্য বজায় রাখতে পারবে বিজেপি? সেটাই এখন দেখার।