কলকাতা ও পূর্ব মেদিনীপুর: বিজেপিতে যোগ দিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিন পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে বিজেপির জনসভায় 'ভাইপো হঠাও'-এর ডাক দিয়েছেন।
এবার শুভেন্দুর ওপর পাল্টা চাপ তৈরি করতে, তাঁর জেলাতেই পদযাত্রা এবং সভা করতে চলেছে তৃণমূল। বুধবার কাঁথির এই কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়।
তাঁদের নেতৃত্বে প্রথমে কাঁথির ক্যানেল পার্ক থেকে ডরমেটারি মাঠ পর্যন্ত পদযাত্রা হবে। তারপর ডরমেটারি মাঠেই হবে সভা।

সভায় উপস্থিত থাকবেন, রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরি। যিনি শুভেন্দু-বিরোধী গোষ্ঠীর বলেই পরিচিত।
শুভেন্দুর পরিবারে এখনও তৃণমূলের তিনজন জনপ্রতিনিধি থাকলেও, তাঁরা কেউ এই কর্মসূচিতে ডাক পাননি বলেই অভিযোগ।
শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী কাঁথির তৃণমূল সাংসদ ও পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি। শুভেন্দুর এক ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী তমলুকের তৃণমূল সাংসদ। আরেক ভাই সৌম্যেন্দু কাঁথির পুরসভার প্রশাসক।
কিন্তু, বুধবারের কর্মসূচির প্রচারে কাঁথি-সহ জেলাজুড়ে যে পোস্টার-হোর্ডিং লাগানো হয়েছে, তাতে কোথাও শিশির অধিকারী, দিব্যেন্দু অধিকারী বা সৌম্যেন্দু অধিকারীর ছবি নেই।বেশিরভাগ প্ল্যাকার্ডে শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। কোথাও কোথাও তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে সৌগত রায় ও ফিরহাদ হাকিমের ছবিও রয়েছে।

শুভেন্দুর ভাই, তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর দাবি, বুধবারের কর্মসূচিতে তাঁকে ডাকা হয়নি। সভা পূর্ব নির্ধারিত হওয়া সত্ত্বেও, তাঁকে এবিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরির দাবি, শিশির অধিকারীকে তিনি ফোন করে সভার ব্যাপারে জানান। কিন্তু, পায়ে চোট থাকায় তিনি আসতে পারবেন না বলে জানান।
তৃণমূল নেতৃত্ব কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছে, অধিকারী পরিবারের থেকে তাঁরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন জেলায় শুভেন্দু-বিরোধী বলে পরিচিত তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরিকে।

সৌগত রায় বলেছেন, আসবেন কী আসবেন না, সেটা শিশিরবাবুর চয়েস... অখিল গিরি ডেকেছেন... অখিল আমাদের পুরোন দিনের কর্মী... শিশিরবাবুর আগে থেকে আছেন... আমরা যাচ্ছি।
শুভেন্দুর নতুন দল তৃণমূলের সভা নিয়ে ভাবছেই না।
গত বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্য্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে, তৃণমূলের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দেন শুভেন্দু অধিকারী। ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির প্যাডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে পাঠানো চিঠিতে শুভেন্দু লেখেন, তৃণমূল বা শাখা সংগঠনে সদস্য এবং অন্য সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে এই চিঠি পাঠাচ্ছি। আমাকে যে সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়েছে, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। দলের সদস্য হিসেবে আমি যে সময় কাটিয়েছি, তা আমার কাছে মূল্যবান হয়ে থাকবে।
এরপর শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরে অমিত শাহর সভায়, তাঁর হাত থেকেই বিজেপির পতাকা তুলে নেন তিনি। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এই প্রেক্ষাপটে পূর্ব মেদিনীপুরে সভা করে তৃণমূল এই বার্তাই দিতে চাইছে যে, শুভেন্দু দল ছাড়ায়, সংগঠনে কোনও প্রভাব পড়বে না।
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ১৬টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৩টিতে জিতেছিল তৃণমূল। ৩টি আসনে জেতে বাম-কংগ্রেস জোট।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ১৬টি আসনের মধ্যে ১৪টিতে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। ২টি আসনে এগিয়ে ছিল বিজেপি।
একুশের ভোটের আগে শুভেন্দুর দলবদলের প্রভাব কি ভোটের ফলে পড়বে সেটাই দেখার। তবে তার আগে নজর শুভেন্দুর দলবদলের পর বুধবার পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের প্রথম কর্মসূচির দিকে।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে,  শুভেন্দুর আক্রমণের জবাব দিতে, তাঁর গড় পূর্ব মেদিনীপুরকেই বেছে নিয়েছে তৃণমূল। বুধবার শুভেন্দুকে নিশানা করতে তার পুরনো দল কী কী অস্ত্র বেছে নেয়, সেটাই দেখার।

এদিকে, বিজেপিতে যোগদানের পর প্রথম নিজের গড় কাঁথিতে বৃহস্পতিবার সভা করবেন শুভেন্দু অধিকারী।