নয়াদিল্লি: দু'পায়ে ভর করে গোটা দুনিয়া চষে ফেলা সম্ভব। কিন্তু খালি পায়ে যেমন হেঁটে বেড়ানো সম্ভব নয়, তেমনই পায়ের জুতো ঠিকঠাক না হলেও সমস্যা হয়। জুতো নিয়ে ভারতীয়দের সমস্যা একটু বেশিই। ইউরোপ এবং আমেরিকার মানুষের চেয়ে ভারতীয়দের পায়ের পাতা চওড়ায় বেশি হয়। তাই ভারতীয়দের জন্য উপযুক্ত জুতোর মাপের নয়া পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব জমা পড়ল। আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপের বাসিন্দাদের জন্য যেমন UK, US, EU মাপের জুতো হয়, তেমনই ভারতীয়দের জন্য জুতোর মাপের নয়া পদ্ধতি 'Bha'/ 'ভা' চালুর প্রস্তাব এল, যা India নয়, Bharat-এর তিনটি আদ্যাক্ষর। (Bha Shoe Sizing System)


ভারতীয়দের জুতসই জুতো তৈরি করতে ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত দেশ জুড়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয়, যার আওতায় ১ লক্ষের বেশি ভারতীয়ের পায়ের পাতা 3D স্ক্যান করা হয়। ওই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতীয়দের পায়ের পাতা বেশ চওড়া। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জুতো পায়ের সঙ্গে ঠিক খাপ খায় না। দৈর্ঘ্যে ঠিক হলে প্রস্থে ঠিক হয় না, আবার প্রস্থে ঠিক হলে, দৈর্ঘ্যে ঠিক হয় না জুতো। ফলে দাম দিয়ে জুতো কিনলেও অস্বস্তি যায় না। বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হয়। (New Indian Shoe Size)


সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতীয় মহিলাদের ক্ষেত্রে পায়ের পাতার বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হয় ১১ বছর বয়সে। পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৫ অথবা ১৬ বছর বয়সে পায়ের পাতার বৃদ্ধি হয় সর্বাধিক। কিছু ক্ষেত্রে জুতোর লেস চেপে বাঁধতে হয়, তাতে রক্ত সঞ্চালনে বিঘ্ন ঘটে। পায়ে ব্যথা হয়, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাও দেখা দেয়। বয়স্ক এবং ডায়বিটিস রোগীদের বেশি সমস্যা হয়। অনলাইন জুতো অর্ডার করলে আরও বেশি সমস্যা হয় বলে অভিযোগ। তাই ভারতীয়দের জন্য় জুতোর সহজ এবং সঠিক মাপ নির্ধারণে 'Bha' পদ্ধতি চালুর পক্ষে প্রস্তাব এসেছে। 




সমীক্ষার বিভিন্ন মুহূর্ত। ছবি: The Leather Post.


নয়া 'Bha' পদ্ধতিতে জুতোর আটটি মাপের উল্লেখ রয়েছে, বয়স অনুযায়ী সেগুলি ঠিক করা হয়েছে। এতে ৮৫ শতাংশ ভারতীয় উপকৃত হবেন যেমন, জুতো তৈরি করে যে সমস্ত সংস্থা, তাদের কাজও সহজ হবে বলে দাবি করা হয়েছে সমীক্ষায়। 'Bha' পদ্ধতিতে জুতোর যে আটটি মাপ বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তা হল-


১) Infant:  ০-১ বছর


২) Toddlers: ১-৩ বছর


৩) Small Children: ৪-৬ বছর


৪) Children: ৭-১১ বছর


৫) Girls: ১২-১৩ বছর


৬) Boys: ১২-১৪ বছর


৭) Women: ১৪ বছর এবং তার ঊর্ধ্ব


৮) Men: ১৫ বছর এবং তার ঊর্ধ্ব


আরও পড়ুন: Priyanka Gandhi Vadra: ‘দেশের জন্য নিজের মঙ্গলসূত্র বিসর্জন দিয়েছেন আমার মা’, মোদিকে ইতিহাস স্মরণ করালেন প্রিয়ঙ্কা


সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ৩ থেকে ৮ পর্যায়ের উপরই বেশি জোর দেওয়া উচিত জুতো সংস্থাগুলির, কারণ এতে অধিকাংশ ভারতীয়ের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। নয়া এই পদ্ধতি চালু হলে, UK পদ্ধতিতে ১০ পৃথক মাপের জুতো তৈরি না করে, আটটি মাপের জুতো তৈরি করলেই চলবে। EU পদ্ধতি অনুসরণ করে চললে, সাতটিতেই হবে। বাড়তি .৫-এর প্রয়োজন পড়বে না।




সমীক্ষার বিভিন্ন মুহূর্ত। ছবি: The Leather Post.


১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই ব্রিটিশরা জুতোর UK মাপ পদ্ধতি চালু করে। ওই পদ্ধতি অনুযায়ী, ভারতীয় মহিলারা সাধারণত ৪ এবং ৬ মাপের জুতো পারেন। পুরুষরা পরেন ৫ থেকে ১১ মাপের জুতো। ভারতীয়দের জন্য আলাদা জুতোর মাপ নেওয়ার পদ্ধতি ছিল না এতদিন পর্যন্ত। কিন্তু ১৪০ কোটির দেশে অধিকাংশ মানুষেরই অন্তত দু'জোড়া করে জুতো থাকে। ফলে ভারত জুতো ব্যবসার বৃহত্তম বাজার হয়ে উঠেছে। তাই ভারতীয়দের জুতোর মাপের পৃথক পদ্ধতি চালু নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। 


সেই আবহেই চেন্নাইয়ের কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্টাস্ট্রিয়াল রিসার্চ-সেন্ট্রাল লেদার রিসার্চ ইনস্টিটিউট (CSIR-CLRI) সমীক্ষা চালায়। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ শিল্প এবং অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য উন্নয়ন বিভাগের (DPIIT) কাছে ভারতীয়দের জুতোর মাপের নয়া পদ্ধতি চালুর প্রস্তাবও জমা দিয়েছে তারা। জানা গিয়েছে, Bureau of Indian Standard (BIS)-এর কাছে সেই প্রস্তাব পাঠিয়ে দিয়েছে DPIIT. BIS-এর অনুমোদন পেলেই জুতোর মাপের নয়া পদ্ধতি চালু হবে দেশে। সব ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যেই জুতোর মাপের নয়া পদ্ধতি চালু হতে পারে বলে আশাবাবী ওই সংস্থা। তবে আগে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া প্রয়োজন বলে মত শিল্পমহলের একাংশের।