ভুজ(গুজরাত): ঋতুচক্র চলছে না, প্রমাণ করতে অন্তর্বাস খুলে প্রমাণ দিতে হল ছাত্রীদের!


শারীরিক পরীক্ষার নামে একেবারে পোশাক খুলিয়ে তল্লাশির অভিযোগ উঠল মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে গুজরাতের ভুজ জেলার শ্রী সহজাননন্দ গার্লস ইনস্টিটিউটে।


খবরে প্রকাশ, সম্প্রতি, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মহিলা হোস্টেলের প্রধান দাবি করেন, ঋতুচক্রের সময় অনেক ছাত্রী ধর্মীয় রীতি-নীতি ঠিকমতো পালন করছেন না। এই মর্মে তিনি কলেজের প্রিন্সিপালের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।


জানা গিয়েছে, এরপরই ৬৮ ছাত্রীর পোশাক খুলিয়ে পরীক্ষা করা হয় যে তাঁদের ঋতুচক্র হয়েছে কি না। এক ছাত্রী জানান, বৃহস্পতিবার তাঁরা ক্লাসরুমে ছিলেন। আচমকা তাঁদের বের করে দিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়।





প্রিন্সিপাল এসে ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে অপমানজনক ও অবমাননাকর কথা বলেন। শুধু তাই নয়, কার কার ঋতুচক্র চলছে, ছাত্রীদের থেকে জানতে চান প্রিন্সিপাল। অভিযোগকারিনী ছাত্রী জানান, ২ জন সহপাঠীর ঋতুচক্র চলছিল। তারা অন্য লাইনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।

অভিযোগ, তাতেও ক্ষান্ত হননি প্রিন্সিপাল। বাকি ছাত্রীদের শৌচালয় নিয়ে যান। শিক্ষিকাদের দিয়ে এক-একজনের পোশাক থেকে শুরু করে অন্তর্বাস পর্যন্ত খুলিয়ে পরীক্ষা করা হয়, কার কার ঋতুচক্র চলছে!


এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই চারদিকে তীব্র শোরগোল পড়ে যায়। যদিও, সমালোচনার মুখে সহজানন্দ ইনস্টিটিউটের তরফে সাফাই দিয়ে ডিন দর্শনা ঢোলাকিয়া দাবি করেন, ছাত্রীদের অনুমতি নিয়েই পরীক্ষা করা হয়েছে। কোনও অবস্থায় জোর করা হয়নি, কাউকে স্পর্শও করা হয়নি। তিনি এ-ও জানান, গোটা বিষয়টি হোস্টেলের সঙ্গে জড়িত। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের কোনও যোগ নেই।





জানা গিয়েছে, এই কলেজটি ক্রান্তিগুরু শ্যামজি কৃষ্ণ বর্মা কচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। পরিচালনের দায়িত্বে রয়েছে স্বামীনারায়ণ মন্দিরের অনুগামীরা। এই গোষ্ঠীর নিয়ম অনুযায়ী, ঋতুচক্র হওয়ার সময় কোনও মহিলা মন্দির ও হেঁশেলে প্রবেশ করতে পারবেন না। এমনকী, অন্য মহিলাদের সঙ্গে মেলামেশাও করতে পারবেন না।

আরেক ছাত্রীর অভিযোগ, প্রায়ই প্রিন্সিপাল, হোস্টেল রেক্টর ও ট্রাস্টিরা এই ঋতুচক্র নিয়ে তাঁদের উত্যক্ত করেন। এমনকী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী পরিষদ সদস্য প্রবীণ পিন্ডোরিয়া ছাত্রীদের জানিয়ে দেন, তাঁরা আইনের সাহায্য নিতেই পারেন, তবে তার আগে হোস্টেল ছেড়ে দিতে হবে।


ছাত্রীদের অভিযোগ, হোস্টেলে এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি বলে জোর করে তাঁদের থেকে লিখিয়ে নেন পিন্ডোরিয়া। কলেজের এক ট্রাস্টি বলেন, যেহেতু ইনস্টিটিউট চত্বরে একটি মন্দির রয়েছে, তাই ছাত্রীদের ওই নিয়ম মানতে বলা হয়েছে। কিন্তু, তাঁদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা অন্যায়।


এদিকে, ছাত্রীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। কী হয়েছিল, জানতে কলেজ কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট তলব করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় জাতীয় মহিলা কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে তদন্ত শুরু করেছে।